মাদারীপুরের কীর্তিনাশা নদীতে স্পিডবোটযোগে এসে বালুবাহী জাহাজে ডাকাতির চেষ্টাকালে গণপিটুনিতে সন্দেহভাজন দুই ডাকাত নিহত হয়েছেন।

মাদারীপুরের কীর্তিনাশা নদীতে স্পিডবোটযোগে এসে বালুবাহী জাহাজে ডাকাতির চেষ্টাকালে গণপিটুনিতে সন্দেহভাজন দুই ডাকাত নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ডাকাতদের হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন অন্তত ৮ জন, আর গুরুতর আহত হয়েছেন আরও পাঁচজন।  
শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে মাদারীপুর-শরীয়তপুর সীমান্তবর্তী খোয়াজপুর-টেকেরহাট বন্দর এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। নিহত ডাকাতদের মধ্যে একজন মুন্সিগঞ্জের কালিরচর এলাকার রিপন এবং অন্যজন শরীয়তপুরের জাজিরার আনোয়ার দেওয়ান।  
স্থানীয়রা জানান, রাত সাড়ে ৯টার দিকে একদল ডাকাত স্পিডবোটে করে এসে বালুবাহী জাহাজে ডাকাতির চেষ্টা চালায়। বিষয়টি বুঝতে পেরে এলাকাবাসী তাদের ধাওয়া দেয়। পালানোর সময় ডাকাতরা হাতবোমা ফাটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং এলোমেলো গুলি ছোড়ে, এতে অন্তত ৮ জন গুলিবিদ্ধ হন।  
ডাকাতির খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা একাধিক ট্রলার নিয়ে ডাকাতদের ধাওয়া করে। পরে শরীয়তপুরের তেঁতুলিয়া এলাকায় গিয়ে ডাকাতদের স্পিডবোটের গতি রোধ করে গণপিটুনি দেয় তারা।  
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে গুরুতর আহত ৭ ডাকাতকে উদ্ধার করে শরীয়তপুর জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুজন মারা যান। বাকিদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।  
চরগোবিন্দপুরের বাসিন্দা রাজু ফরাজী বলেন, "ডাকাতি হচ্ছে এমন খবর পেয়ে আমরা ট্রলার নিয়ে নদীতে নামি। ডাকাতরা আমাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে, এতে ৮ জন আহত হন। ডাকাতদের সবার হাতেই অস্ত্র ছিল।"
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী সজীব সরদার বলেন, "মসজিদ থেকে মাইকিং করা হলে লোকজন জড়ো হয়। ডাকাতদের পথরোধ করলে তারা এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে, এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।"
আহত দুলাল সরদার বলেন, "আমরা কয়েকজন ট্রলারে ছিলাম। ডাকাতদের ধাওয়া দিলে তারা আমাদের দিকে গুলি চালায়। এতে আমি ও আরও অনেকে গুলিবিদ্ধ হই।" 
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. মুনতাচ্ছির খান জানান, "আহতদের অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক হওয়ায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। হাসপাতালে আনার আগেই দুজনের মৃত্যু হয়েছে।"
মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোকছেদুর রহমান বলেন, "সংবাদ পাওয়ার পর সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এর আগেই ডাকাতরা পালিয়ে শরীয়তপুরের দিকে চলে যায়। আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, এবং প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"  
শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, "গণপিটুনির পর স্থানীয়রা ৭ ডাকাতকে বিভিন্ন স্থানে ফেলে রাখে। পুলিশ তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়, যেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুজন মারা যান। বাকিদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।"
এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে, তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।