আজ ২৮ জুন। এক জীবন্ত কিংবদন্তী, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, ক্ষুদ্রঋণের জনক এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ৮৪তম জন্মদিন

আজ ২৮ জুন। এক জীবন্ত কিংবদন্তী, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, ক্ষুদ্রঋণের জনক এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ৮৪তম জন্মদিন। এই দিনটি কেবল একজন ব্যক্তির জন্মদিন নয়, এটি একটি আদর্শ ও স্বপ্নের জন্মদিন—যে স্বপ্ন দারিদ্র্যমুক্ত এক পৃথিবীর, যে আদর্শ মানবকল্যাণের।

চট্টগ্রামের হাটহাজারীর এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া যে শিশুটি একদিন বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করবেন, তা হয়তো সেদিন কেউ ভাবেনি। কিন্তু নিজের প্রজ্ঞা, কর্মনিষ্ঠা আর মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা দিয়ে তিনি নিজেকে পরিণত করেছেন এক বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্বে। তাঁর হাত ধরেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘গ্রামীণ ব্যাংক’—এক যুগান্তকারী ধারণা, যা বদলে দিয়েছে বিশ্বের কোটি কোটি প্রান্তিক মানুষের ভাগ্য। তিনি শিখিয়েছেন, দারিদ্র্য কোনো ব্যক্তিগত ব্যর্থতা নয়, বরং ব্যবস্থার ব্যর্থতা। সেই ব্যবস্থা বদলের সংগ্রামে তিনি হয়ে উঠেছেন এক অবিসংবাদিত নেতা, এক ‘গরিবের ব্যাংকার’।

২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রাপ্তি ছিল তাঁর বিশ্বজয়ের এক আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি মাত্র। আদতে তিনি মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন বহু আগেই। তাঁর সামাজিক ব্যবসার ধারণা আজ বিশ্বজুড়ে সমাদৃত, যা মুনাফার ঊর্ধ্বে উঠে মানুষের সমস্যা সমাধানকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়।

আজকের এই জন্মদিনটি তাঁর জীবনের আর সব জন্মদিনের চেয়ে ভিন্ন। তিনি এখন আর কেবল একজন অর্থনীতিবিদ বা সমাজসেবক নন, তিনি এক ক্রান্তিকালে দাঁড়িয়ে থাকা বাংলাদেশের প্রধান অভিভাবক। জাতির এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে, যখন গণতন্ত্র ও সুশাসনের জন্য উন্মুখ কোটি জনতা, তখন তিনিই হয়েছেন আশার আলো, ঐক্যের প্রতীক। তাঁর কাঁধে আজ এক নতুন বাংলাদেশ গড়ার গুরুদায়িত্ব। জন্মদিনের ব্যক্তিগত উদযাপনের ঊর্ধ্বে উঠে তিনি আজ নিবেদিত দেশ গড়ার মহান ব্রতে।

সকাল থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভাসছে ড. ইউনূসের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার বার্তায়। দেশ-বিদেশের অগণিত ভক্ত, অনুরাগী, রাষ্ট্রনেতা এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তাঁকে জানাচ্ছেন জন্মদিনের শুভেচ্ছা। তারা কেবল তাঁর দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করছেন না, বরং তাঁর নেতৃত্বে একটি সমৃদ্ধ, বৈষম্যহীন ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ দেখার আশাবাদ ব্যক্ত করছেন।

ড. ইউনূসের জীবন এক কর্মযোগী মানুষের উপাখ্যান। তাঁর জন্মদিনটি তাই নিছক উৎসবের উপলক্ষ্য নয়, এটি তাঁর কর্ম ও দর্শন থেকে অনুপ্রেরণা নেওয়ার দিন। তাঁর দেখানো পথেই হয়তো আগামীর বাংলাদেশ খুঁজে পাবে তার কাঙ্ক্ষিত মুক্তির ঠিকানা।

শুভ জন্মদিন, আমাদের সময়ের নায়ক, জাতির দিশারি। আপনার আলোয় আলোকিত হোক প্রিয় মাতৃভূমি। আপনার দেখানো পথে বাংলাদেশ এগিয়ে চলুক এক স্বর্ণালি ভবিষ্যতের দিকে। আপনার সুস্থ ও কর্মময় দীর্ঘজীবন আমাদের একান্ত কামনা।