রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জন্মগ্রহণ করেন ১৮৬১ সালের ৭ মে, কলকাতার অভিজাত ও সংস্কৃতিমনস্ক ঠাকুর পরিবারে। ছোটবেলা থেকেই লেখালেখির প্রতি ছিল প্রবল অনুরাগ। মাত্র আট বছর বয়সে কবিতা লেখা শুরু করেন, আর ১৬ বছর বয়সেই প্রকাশ পায় তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ। তিনি ছিলেন বিশিষ্ট সমাজ সংস্কারক, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও শিল্পী—এক কথায়, বহুমাত্রিক প্রতিভার এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন কাব্যগ্রন্থ গীতাঞ্জলি-র জন্য। তিনিই প্রথম এশীয় ব্যক্তি যিনি সাহিত্যে এই সম্মান অর্জন করেন।
বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় সংগীত তাঁরই লেখা, যা তাঁর সার্বজনীন ভাবনার গভীর প্রতিফলন।
রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন ২,০০০-র বেশি গান, অসংখ্য কবিতা, ছোটগল্প, নাটক ও প্রবন্ধ। জীবনের শেষ দিকে চিত্রকলার জগতে প্রবেশ করে সৃষ্টি করেছেন প্রায় ২,৩০০টির মতো চিত্রকর্ম।
তাঁর প্রতিষ্ঠিত শান্তিনিকেতন পরবর্তীতে বিশ্বভারতীতে রূপ নেয়—যা আজও বিকল্পধর্মী শিক্ষার প্রতীক।
১৯৪১ সালের ২২ শ্রাবণ, জীবনের শেষ কবিতা লিখে তিনি চিরতরে চলে যান। কবির ভাষায়, “জীবন যদি চোখে দেখা স্বপ্ন তবে মৃত্যুই তার জাগরণ।”
বাংলাদেশ ও ভারতের নানা প্রান্তে আজ দিনব্যাপী রবীন্দ্রস্মরণে চলছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পাঠচক্র, গান ও আবৃত্তি।
বাংলা একাডেমি, ছায়ানট, বিশ্বভারতীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আয়োজন করেছে স্মরণসভা ও রবীন্দ্রসংগীতের আসর। অনলাইনেও ছড়িয়ে পড়েছে শ্রদ্ধাঞ্জলি—সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান শেয়ার করে স্মরণ করছে অসংখ্য ভক্ত।
বিশিষ্ট সাহিত্যিক অধ্যাপক আনিসুজ্জামান (প্রয়াত) একবার বলেছিলেন,
"রবীন্দ্রনাথ এমন এক শিখর, যার কাছে গেলে নিজেকে ক্ষুদ্র মনে হয়, অথচ সেই ক্ষুদ্রতাতেই গভীর আনন্দ থাকে।"
আজকের প্রজন্মের কাছে রবীন্দ্রনাথ যেন এক আশ্রয়। প্রেমে, বিচ্ছেদে, প্রতিবাদে, সংকটে—তাঁর সৃষ্টি হয়ে ওঠে শক্তির উৎস। তিনি শুধুই একজন কবি নন, বরং এক চিন্তাধারা, এক জীবনচর্চা, এক চিরন্তন প্রেরণা।
রবীন্দ্রনাথ নেই—এ কথা শুধু শরীরের অনুপস্থিতি। তিনি আছেন তাঁর গান, কবিতা, দর্শন আর চেতনায়। ২২ শ্রাবণ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, স্রষ্টারা মরেন না, তাঁরা রয়ে যান সৃষ্টির ভেতর দিয়ে।