রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলীপুর ও শহীদওহাবপুর ইউনিয়নের বিদ্যুৎ গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিল প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ওজোপাডিকোর মিটার রিডারম্যান মোঃ মুক্তার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে।
বুধবার (০২ জুলাই) দুপুরে অর্ধ শতাধিক গ্রাহক রাজবাড়ী জেলা প্রশাসকের নিকট প্রতিকার চেয়ে ও অভিযুক্তের শাস্তির দাবীতে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
প্রতারণার শিকার জহিরুল ইসলাম, বাবুল শেখ, বরিন, আনোয়ার, সুলতান সহ অনেকেই বলেন, রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের চরনারায়নপুর গ্রামের সেলিম রেজা ওরফে সেলিম মাষ্টারের ছেলে মোঃ মুক্তার বিশ্বাস (৪০) একজন প্রতারক ও ভূয়া বিদ্যুৎ মিটার রিডারম্যান। সে দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর ধরে আমাদের এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। অভিযুক্ত মুক্তার বিশ্বাস রাজবাড়ী জেলা ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারী মিটার রিডারম্যান হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলীপুর ও শহীদওহাবপুর ইউনিয়নে বিদ্যুৎ বিল তৈরি, গ্রাহকদের কাছ থেকে বিল সংগ্রহ, বিকাশের মাধ্যমে বিল আদায় এবং নতুন সংযোগের নামে অর্থ গ্রহণ করে থাকেন। ২০২৩ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রায় দুই বছরে ২টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন। অধিকাংশ গ্রাহককে সে ভুয়া বিল প্রদান করে, যা বিদ্যুৎ বিভাগের স্বাক্ষর ও লোগোসহ ছাপানো ছিল। এমনকি গ্রাহকদের মাসের পর মাস বকেয়া বিল থাকা সত্তে¡ও তাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়নি। যা থেকে বোঝা যায় যে বিদ্যুৎ বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা তাকে সহযোগিতা করে আসছে। এ প্রতারণার ফলে আমরা ভুক্তভোগী গ্রাহকগণ এখন প্রকৃত বিদ্যুৎ বিলের বিপরীতে আবার অর্থ পরিশোধের চাপের মুখে রয়েছি। যা সম্পূর্ণ অনৈতিক ও অবিচার। প্রতারক মোঃ মুক্তার বিশ্বাস ও তার সহযোগীদের দ্রæত খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবী জানান।
তারা আরও বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট অসাধু কর্মকর্তাদের তদন্ত সাপেক্ষে শনাক্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। ভুয়া বিলের কারণে ভুক্তভোগী গ্রাহকদের বিরুদ্ধে নেয়া সকল প্রশাসনিক ও আর্থিক চাপ বাতিল করা হোক। ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রতারণা প্রতিরোধে বিদ্যুৎ বিভাগের কার্যক্রম মনিটরিং ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা হোক। বিদ্যুৎ গ্রাহক হিসেবে প্রতারকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করে ভোগান্তির অবসান ঘটানোর জন্য দ্রæত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবী জানান।
জানাযায়, গ্রাহক বরিনের ১লক্ষ ৬০ হাজার টাকা, জহিরুল ইসলামের ২লক্ষ ১২ হাজার টাকা, বাবুল শেখের ৭৫ হাজার ৫শত টাকা, কোরবানের ১লক্ষ ৩২ হাজার টাকা, আনোয়ারের ৯৩ হাজার টাকা, সেলিমের ২৮ হাজার টাকা, আব্বাসের ৫৩ হাজার টাকা, বিল্লালের ১৮ হাজার ৫শত টাকা, রফিকুল ইসলামের ৪০ হাজার টাকা, আবুল বাশারের ৩৯ হাজার ৫শত ৫১ টাকা, আব্দুর রবের ১১ হাজার ৮শত টাকা, ইসহাক মন্ডলের ৪ হাজার ৪৪৪ টাকা, সেলিম বেপারীর ৮ হাজার ৬৭১ টাকা, সাহিদা বেগমের ১০ হাজার ২৫১ টাকা, আব্দুর রব শেখের ২৭ হাজার ৫৪৬ টাকা, সাইফুল ইসলামের ১০ হাজার ৯১ টাকা, হাবীবের ৯ হাজার ৪৯৪ টাকা, মোতাহারের ৬ হাজার ৬শত টাকা, সাঈদের ৭ হাজার ১৪৫ টাকা, জালাল গাজীর ৬হাজার ৪২৮টাকা, শিপনের ১৮ হাজার ৮৭০টাকা, মজিবরের ১৫ হাজার টাকা, গাজী হোটেলের ৫৯ হাজার ৭৮৩ টাকা, জহিরের ১লক্ষ ১২ হাজার টাকা, আমেনা বেগমের ৩১ হাজার ১৫৬ টাকা, আনোয়ারের ৯৩ হাজার ৩৯৭ টাকা, সুলতানের ৭ হাজার ২৯৫ টাকা, সুকরা বেগমের ৩ হাজার ৫৭ টাকা, সিরাজের ১৩ হাজার টাকা, ইয়াছিনের ৭ হাজার টাকা, জামালের ১০ হাজার ৫শত টাকা, বাবুর ৯ হাজার টাকা, সেলিমের ৬ হাজার ৪৭০ টাকা, নুর জাহানের ৩ হাজার ৮শত টাকা, শহীদ বেপারীর ২ হাজার ৩শত টাকা, চাঁন মিয়ার ১ হাজার ৭৬৩ টাকা, মজিদ খানের ১০ হাজার ২শত টাকা, নুপুরের ১০ হাজার টাকা, আব্দুল মান্নানের ৮ হাজার টাকা, আব্দুল খালেকের ৪ হাজার ১শত টাকা, খলিলের ১৯ হাজার ৫৫২ টাকা, লতিফ শেখের ১লক্ষ ১১ হাজার ১৬ টাকা, আইয়ুব বেপারীর ৭৫ হাজার টাকা, রোজিনার ৭৫ হাজার টাকা, বাবুর ৮ হাজার ৮৯৩ টাকা,সফুর ৩ হাজার ৫৭ টাকা সহ অনেক গ্রাহকের টাকা আতœসাৎ করে।
রাজবাড়ী ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন-অর রশীদ বলেন, মাষ্টারোল কর্মচারী মুক্তার বিশ^াসকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে কথা বলে দ্রæত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।