কমলনগরে প্রাথমিক শিক্ষকদের টানা কর্মবিরতি পালন-সঙ্কট নিরসনে নেই কোন দৃশ্যমান উদ্যোগ!
লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে প্রাথমিক শিক্ষকদের সপ্তম দিনেও টানা কর্মবিরতি পালন করা হয়েছে। তিনদফা দাবি আদায়ে ঘোষিত কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে কমলনগর উপজেলার ৬৯ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৫শতাধিক সহকারী শিক্ষক এই কর্মসূচি পালন করেন। আজ সোমবার সকাল ৯টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করেছেন উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষকদের এন্ট্রিপদে ১১তম গ্রেডে বেতন প্রদানসহ তিন দফা দাবিতে সারা দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা টানা কর্মবিরতি পালন করার ঘোষণা দেন শিক্ষকদের সকল সংগঠন। তাদের ঘোষিত কর্মসূচি পালন করেছেন মাঠ পর্যায়ের দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় পৌনে চার লাখ শিক্ষক।
প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের ব্যানারে সম্মিলিতভাবে এ কর্মবিরতির ডাক দেয়া হয়েছে ইতোপূর্বে। এরই ধারাবাহিকতায় কমলনগর উপজেলার বেশ কয়েকটি বিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, শিক্ষকরা নির্ধারিত সময়ে বিদ্যালয়ে আসলেও শ্রেণিকক্ষে গিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও এ সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম থেকে বিরত থাকেন তাদের ঘোষিত কর্মসূচির সপ্তম দিনের এক ঘন্টা সময় ধরে। অবশ্য সকাল ১০ টা পরে শিক্ষকরা ক্লাসে গিয়ে আগের মতো আনন্দঘন পরিবেশে শিক্ষার্থীদের প্রথম প্রান্তিক মূল্যায়ন কার্যক্রম শুরু করেন।
প্রাপ্ত সূত্রে জানা যায়, আজ থেকে শুরু হওয়া শিক্ষকদের এ কর্মসূচি আগামী ১৫ মে পর্যন্ত চলবে। প্রথম দফায় তারা প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করবেন। পরবর্তী সময়ে তাদের দাবি মেনে না নেওয়া হলে টানা কর্মবিরতি কিংবা 'তালাবদ্ধ'র মতো কঠোর কর্মসূচি চলমান থাকবে।
কর্মবিরতি বিষয়ে কমলনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক কাজী মুহাম্মদ ইউনুছ বলেন,আমরা দীর্ঘদিন ধরে ১০ম গ্রেডের দাবিতে আন্দোলন করে আসছি কিন্তু সার্বিক বিবেচনায় ও বাস্তবতা ও সময়ের প্রেক্ষাপটে আমরা এন্ট্রিপদে নূন্যতম ১১তম গ্রেডে প্রদানের দাবিতে 'অহিংস ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীর মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষাকে উঁচু স্তরের পৌঁছাতে,মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা গড়তে চলমান কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে শিক্ষকদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় সদাশয় সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
এ বিষয়ে কমলনগর উপজেলার সহকারি শিক্ষক সমন্বয়ক ও হাজির হাট মডেল একাডেমির শিক্ষক মোহাম্মদ ইবরাহীম বলেন, ‘সরকার আমাদের ১০ম গ্রেডের দাবি মেনে নেয়নি,সর্বশেষ ১১তম গ্রেড প্রদানের দাবি করলেও তাও আমাদের সাথে কোনো আলোচনা করারও প্রয়োজন মনে করেনি। বাধ্য হয়ে আমরা কেন্দ্র ঘোষিত কর্মবিরতি পালন করছি।
তিনি আরো বলেন প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের ঘোষণা অনুযায়ী, আজ থেকে ১৫ মে সারা দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করা হবে। এরপর ১৬ থেকে ২০ মে পর্যন্ত দুই ঘণ্টা, ২১ থেকে ২৫ মে পর্যন্ত অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করবেন শিক্ষকরা।
তারপরও যদি দাবি-দাওয়া না মানা হয়, তাহলে ২৬ মে থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লাগাতর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ নেতারা।কমলনগর উপজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সাধারন সম্পাদক মোঃ আবদুস সহিদ বলেন, একটা জাতিকে সুশিক্ষার প্রাথমিক ভিত্তি স্থাপন করার পেছনে যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর রক্তঘাম মিশে আছে তাদেরকে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীর মূল্যায়ন দেওয়া হয়েছে এর থেকে বড় বৈষম্য আর কি হতে পারে?
উপজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক বীরেশ্বর চক্রবতী বলেন, কনসালটেন্ট কমিটির সুপারিশে এন্ট্রিপদে আমাদের বেতন মাত্র ৩০০ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে যা অত্যন্ত হাস্যকর। আমাদের প্রাপ্ত সম্মানের সাথে সম্মানিটাও যেন সম্মানজনক হয় সেই দাবি করছি। আমাদেরকে যে বেতন দেওয়া হয় সেটা দিয়ে ভালো মতো বাঁচার কোন উপায় নেই। সরকারের কাছে জোর দাবি জানাই শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতি যাতে না হয় সেজন্য অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবি মেনে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।দাবিগুলো হচ্ছে -
১. সরকারের গঠিত কনসালটেশন কমিটির সুপারিশের যৌক্তিক সংস্কার করে সহকারী শিক্ষক পদকে এন্ট্রি পদ ধরে ১১তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ।
২. ১০ বছর ও ১৬ বছরপূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা নিরসন।
৩. প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতিসহ দ্রুত পদোন্নতি প্রদান।