জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা কার্যক্রম নিয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের চলমান আন্দোলনে ঘি ঢালল সরকার

জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা কার্যক্রম নিয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের চলমান আন্দোলনে ঘি ঢালল সরকার। এনআইডি সেবা কার্যক্রম আপাতত নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে থাকলেও ভবিষ্যতে স্বাধীন ডেটা অথরিটির কাছে যাবে বলে জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
এদিকে গতকাল জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনে রাখার দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার ‘স্ট্যান্ড ফর এনআইডি’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কেন্দ্রীয় ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এদিন বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন-ইসি কর্মীরা সারাদেশে নিজেদের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেবেন। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক ও উপসচিব মোহাম্মদ মনির হোসেন।
ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের আন্দোলনের পর সন্ধ্যার দিকে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব আগারগাঁওয়ের আইসিটি ভবনে ‘এনআইডির ওনারশিপ’ শীর্ষক এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে জানান, আপাতত এনআইডি সেবা কার্যক্রম ইসির কাছেই থাকবে। তবে আগামীতে একটা ডেটা অথরিটি হবে। আর ইসির যে আইটি সেল আছে, সেটি বন্ধ হবে না। শুধু এর যে সফটওয়্যার-হার্ডওয়্যার ও কারিগরি ক্ষমতা আছে, সেটা আমরা নিয়ে নেব। ডেটা অথরিটির মাধ্যমে রেগুলেটেড হবে, যার কাছে যা আছে, তা আপাতত সেখানেই থাকবে।
ডেটা অথরিটির ফলে কারও চাকরি যাবে না জানিয়ে ফয়েজ আহমদ বলেন, ডেটা অথরিটির ধারণা দেওয়ার মাধ্যমে আমরা ভবিষ্যতের যাত্রা শুরু করলাম। এর মাধ্যমে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে যে আইটি ইনফ্রাস্ট্রাকচার রয়েছে, সেগুলো বন্ধ হবে না। তাদের কারও চাকরি যাবে না, কোনো ক্ষতি হবে না। বরং প্রতিটি ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হবে। অন্য মন্ত্রণালয়ের যে ডেটা প্রাপ্তির অধিকার, তা আরও সুরক্ষিত হবে।
ফয়েজ আহমদ বলেন, এখন ইসি যে ডেটাবেজ মেইনটেইন করে, তারা সেটাই মেইনটেইন করবে। কিন্তু ধীরে ধীরে আমাদের একটি স্বাধীন ডেটা অথরিটির দিকে যেতে হবে। যেটি আমাদের লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক, অথেন্টিকেশন ফ্রেমওয়ার্ক, ডেটা এক্সটেন্ট ফ্রেমওয়ার্কের জন্য জরুরি, যার ওপর ভিত্তি করে আমাদের ডিজিটাল অপরচুনিটিগুলো দাঁড়িয়ে আছে। আইসিটি খাতকে যদি আমরা গার্মেন্টসের আদলে রপ্তানিমুখী খাত হিসেবে প্রতিস্থাপন করতে চাই এবং সার্বিকভাবে অর্থনীতির বিকাশ করতে চাই, তা হলে আমাদের এই যাত্রায় যেতেই হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে ফয়েজ আহমদ বলেন, এটি কোনো মন্ত্রণালয়ের অধীনে যাবে না। এখনই যে সরিয়ে ফেলতে হবে, সেটিও আমরা বলছি না। আমরা বলছি, কার্যক্ষমতা আরও ভালো করতে চাচ্ছি।
এর আগে দুপুরে ইসি অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক মনির হোসেন বলেন, স্ট্যান্ড ফর এনআইডি কর্মসূচিতে বৃহস্পতিবার আমরা অফিসের সামনে অবস্থান নেব। সঙ্গত কারণে কাজ বন্ধ রেখে সব কর্মকর্তা-কর্মচারী তাতে অবস্থান নেবেন। এরপরও যদি সরকার কোনো পদক্ষেপ না নিলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করব। তিনি বলেন, এনআইডি কার্যক্রম নির্বাচন কমিশন থেকে অন্য কোথাও না নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে আমরা ৫ মার্চ সিইসির কাছে স্মারকলিপি দিয়েছিলাম। কিন্তু কমিশনের পক্ষ থেকে পেলেও সরকারের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ দেখিনি।
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, ভোটার তালিকা ও এনআইডি একসঙ্গে নির্বাচন কমিশনে রাখার পক্ষে ইসির আগের সংলাপগুলোতে অংশীজনরা মতামত দিয়েছেন। সর্বশেষ ২০২৩ সালে একটি আইন করে শুধু এনআইডি সেবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে নেওয়ার চেষ্টা হয়। অন্তর্বর্তী সরকার বিদ্যমান আইনটি বাতিল করে এনআইডি ইসির অধীনেই রাখার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু মাঝপথে দেখা যাচ্ছে, আলাদা করে একটি কমিশন বানিয়ে এনআইডি তার অধীনে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলো। এনআইডি আলাদা হলে নির্বাচনব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হবে বলে জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক এসএম আসাদুজ্জামান, অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সচিব মতিয়ুর রহমান, আশরাফ হোসেন, মো. হাসানুজ্জামান ও সাইফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।