শরীয়তপুর জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপজেলার সখিপুর থানা। নদ-নদী, খাল-বিল ও সবুজ প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘেরা এ থানা চারপাশে নদী পর্যটন সম্ভাবনায় সমৃদ্ধ হলেও এখানে গড়ে ওঠেনি কোনো উল্লেখযোগ্য পর্যটন কেন্দ্র বা বিনোদনমূলক অবকাঠামো। যুবসমাজের জন্য নেই নিয়মিত খেলাধুলা কিংবা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের পর্যাপ্ত সুযোগ, যা দিন দিন মানসিক অবক্ষয়ের কারণ হয়ে উঠছে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে তরুণদের জন্য নেই কোনো আধুনিক পার্ক, বিনোদন কেন্দ্র, পাবলিক লাইব্রেরি, খেলার মাঠ বা সাংস্কৃতিক মঞ্চ। স্কুল-কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা অবসর সময়ে গ্যাজেট আসক্তি বা অলসতায় সময় কাটাতে বাধ্য হচ্ছে।
হাজী শরীয়তউল্লাহ কলেজের একাদশ শ্রেনীর শিক্ষার্থী আরাফাত বলেন, “আমরা শুধু পড়ালেখা করি, কিন্তু অবসর সময় কাটানোর জন্য কিছুই নেই। খেলাধুলার জায়গা নেই, সাংস্কৃতিক কোনো সুযোগ নেই। সময়গুলো মোবাইলে নষ্ট হয়।”
হাবীবউল্লাহ কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী মারিয়া বলেন, “আমাদের মেয়েরা তো ঘরের বাইরে বিনোদনের কোনো জায়গাই পায় না। একটা নিরাপদ পার্ক, একটা সাংস্কৃতিক অডিটোরিয়াম, কুটির শিল্প থাকলে আমরা অনেক কিছু করতে পারতাম।”
স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিভাবক সাহেরা বানু বলেন, “আমার ছেলেমেয়েরা সারাক্ষণ ফোনে সময় কাটায়। কোথাও যেতে পারে না। যদি একটা খেলার মাঠ বা সাংস্কৃতিক ক্লাব থাকত, তাহলে ওদের মানসিক বিকাশ হতো।”
হাজী শরীয়তউল্লাহ কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান সঞ্জিত বালা, “মানসিক স্বাস্থ্য ও সামাজিক বিকাশে খেলাধুলা, বিনোদন ও সাংস্কৃতিক চর্চার বিকল্প নেই। এসব সুযোগের অভাবে তরুণরা হতাশায় পড়ে, অনেকে মাদক বা অপরাধের দিকেও ঝুঁকতে পারে।”
ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আদিত্য মন্ডল বলেন, “আমরা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় রাখবো এবং উদ্ধৃতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে ভেদরগঞ্জ ও সখিপুর থানায় পাবলিক লাইব্রেরি ও খেলার মাঠ অনুপযোগী করার কথা বলবো এবং বাজেট বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু হবে।”
সংসদ সদস্য আলহাজ্ব শফিকুর রহমান কিরন বলেন, “আমরা চাই সখিপুরে অন্তত একটি আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র ও একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হোক। সখিপুর উপজেলার করার কাজ চলোমান উপজেলা হয়ে গেলে বাকি সব এভাবেই হবে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রস্তাব পাঠানো হবে। ইনশাআল্লাহ, খুব শিগগিরই দৃশ্যমান অগ্রগতি হবে।”
স্থানীয় সাংস্কৃতিক ফোরামের সভাপতি মনির সরদার বলেন “তরুণদের মাঝে সাংস্কৃতিক চর্চার আগ্রহ আছে, কিন্তু জায়গা ও সুযোগের অভাবে তারা এগিয়ে যেতে পারছে না। একটি স্থায়ী মঞ্চ, গ্রন্থাগার, ও কর্মশালার পরিবেশ হলে আমরাও নিয়মিত অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পারতাম।”