দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত এক জনপদের নাম সন্দ্বীপ। বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষা এই দ্বীপটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, কৃষি সম্ভাবনা ও নৌপথের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানেও যুগের পর যুগ ধরে পিছিয়ে রয়েছে অবকাঠামো, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও প্রশাসনিক সেবায়। তবে সেই নীরবতা এখন ইতিহাস। ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত সন্দ্বীপ অধিকার আন্দোলন এর মধ্য দিয়ে দ্বীপবাসী আজ নিজেদের অধিকার আদায়ে সংগঠিত, সোচ্চার ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
আন্দোলনের পেছনের বাস্তবতা নদীভাঙন, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত সন্দ্বীপবাসী শুধু দুর্যোগ নয়, বরং সরকারি অবহেলাও মুখোমুখি হয়েছে বারবার। সেতু, ফেরিঘাট, বিদ্যুৎ, সুপেয় পানি ও শিক্ষা-স্বাস্থ্যখাতে দীর্ঘসূত্রতা, অব্যবস্থা ও রাজনৈতিক প্রভাব দ্বীপের উন্নয়নের বড় বাধা। এই ব্যর্থতার প্রতিবাদেই শুরু হয় ‘সন্দ্বীপ অধিকার আন্দোলন’।
লক্ষ্য ও দাবিসমূহ নদীভাঙন ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ,সেতু বা নিয়মিত নিরাপদ ফেরি চালুর মাধ্যমে যোগাযোগের উন্নয়ন, বিদ্যুৎ ও নিরাপদ পানির ব্যবস্থা,শিক্ষক সংকট নিরসন ও স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন,প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
আন্দোলনের রূপ ও কৌশল ইউনিয়নভিত্তিক সভা, বিক্ষোভ ও মানববন্ধন,অনলাইন প্রচার ও ভিডিও রিপোর্ট,চট্টগ্রাম ও ঢাকায় স্মারকলিপি প্রদান,প্রবাসী সন্দ্বীপবাসীদের সম্পৃক্তকরণ
উল্লেখ কর্মসূচি ও ঘটনার সারসংক্ষেপ ২০২২ স্পিডবোট দুর্ঘটনায় শিশুমৃত্যুর প্রতিবাদে মানববন্ধন,উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শিশুমৃত্যু: চিকিৎসায় অবহেলার বিরুদ্ধে জনসচেতনতা,২০২৩ আইসিইউ সেবার দাবিতে তিন মাসব্যাপী গণস্বাক্ষর ও প্রচার,রমজান ২০২৩ ৬৯০ টাকা কেজি দামে গরুর মাংস বিক্রি, ব্যাপক প্রশংসা,ফেরিঘাট উন্নয়ন আন্দোলন: নিরাপদ নৌযোগাযোগের জোর দাবি
চ্যালেঞ্জ সরকারি উদাসীনতা,স্থানীয় রাজনৈতিক বিভাজন,সীমিত অর্থায়ন ও সম্পদ।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ভূমি ও নদীভাঙন প্রতিরোধে নীতিপত্র,ই-অধিকার হেল্পডেস্ক’ চালু,গ্রামে গ্রামে অধিকার শিক্ষা কার্যক্রম।
সামাজিক মাধ্যমে প্রচার ও মাল্টিমিডিয়া টিম গঠন প্রবাসী সন্দ্বীপবাসীদের সংযুক্তির জন্য প্ল্যাটফর্ম,সন্দ্বীপ ডেভেলপমেন্ট অ্যাজেন্ডা ২০৩০" প্রস্তাবনা।
সন্দ্বীপ অধিকার আন্দোলন কেবল একটি সামাজিক প্রতিক্রিয়া নয়—এটি একটি সম্ভাবনার জাগরণ।
এই আন্দোলন প্রমাণ করেছে, প্রান্তিক জনগণও যদি ঐক্যবদ্ধ হয়, তবে তারা উন্নয়ন ও রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসতে পারে। সন্দ্বীপের আন্দোলন আজ কেবল দ্বীপবাসীর নয়, বরং বাংলাদেশের সব উপেক্ষিত মানুষের জন্য এক সাহসী অনুপ্রেরণা।
