বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের কক্সবাজার উপকূল ঘেঁষা ছোট্ট একটি দ্বীপ কুতুবদিয়া, যার গায়ে খেলা করে সমুদ্রের ঢেউ, বাতাসে ভেসে আসে লবণের ঘ্রাণ, আর মাটির বুক জুড়ে লুকিয়ে আছে অফুরন্ত সম্ভাবনা। অথচ আজও এই দ্বীপে দুই-লক্ষাধিক মানুষের জীবন যেন প্রতিদিন লড়াই, প্রতিদিন বাঁচার যুদ্ধ। এই দ্বীপে নেই কোনো সেতু, নেই কোনো নির্ভরযোগ্য ফেরি সার্ভিস। চিকিৎসা নেই, উন্নয়ন নেই, নেই সুসংগঠিত যোগাযোগ ব্যবস্থাও।


কুতুবদিয়া দ্বীপবাসীর আর্তনাদ:

কুতুবদিয়ার দুঃসময়ে গত ৮ এপ্রিল এক অভূতপূর্ব ঘটনা সংঘটিত হলো: উন্নত চিকিৎসার আশায় দুই-তিন ঘণ্টা নৌকায় ছটফটানো এক গর্ভবতী নারী মাঝ সমুদ্রে প্রসব বেদনায় আক্রান্ত হয়ে সন্তান প্রসব করলেন। স্পিডবোটের নাবিক ছিলেন অপ্রশিক্ষিত, কিন্তু একদমই কাকতালীয়ভাবে সেখানে উপস্থিত ছিলেন ডা. সৈকত বড়ুয়া, যিনি মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই নবজাতককে পৃথিবীতে নিয়ে এলেন। এ-দৃশ্য চিত্রায়িত হলো কুতুবদিয়ার ভয়ের, যেখানে ঝড়ের তুফানে চিকিৎসালয়ে পৌঁছানোটাও জীবনের ঝুঁকি। এই ঘটনাই তুলে ধরল দ্বীপবাসীর নাজুক স্বাস্থ্য অবস্থা। ‘প্রশিক্ষিত প্যারামেডিক এবং জল-অ্যাম্বুলেন্স না-থাকায় এমন দুর্ঘটনা ঘটে’ বলে ডা. বড়ুয়া শোভন মন্তব্য করেন।


জলবায়ু ঝুঁকি ও ভূমিক্ষয়: ১৯৯১ ও পরবর্তী পাঁচটি বড় ঘূর্ণিঝড়ে দ্বীপের বিস্তীর্ণ ভূমি ভেসে গেছে এবং বর্তমান প্লাবন‑প্রবণ অঞ্চল থেকে আনুমানিক ৬০,০০০ জন পরিবার দ্রুত অপসারিত হয়েছে। সাম্প্রতিক উদাহরণ হলো ২০২৪ সালের রেমাল ঘূর্ণিঝড়, যেখানে কুতুবদিয়ার শতশত কুটির ও স্কুলভবন নষ্ট হয়ে যায় এবং কয়েক কিলোমিটার স্থায়ী বেড়িবাঁধ ভেঙে পড়ে। উপকূলীয় ভাঙন রোধে এবং প্রতি বর্ষায় প্রবল জোয়ারের ধাক্কা সামলাতে একটি আধুনিক ও টেকসই বেড়িবাঁধ অত্যাবশ্যক।

সম্প্রতি মহেশখালীতে সি-ট্রাক চালু হওয়া, আর সংলগ্ন সেতু-প্রকল্পের ঘোষণা সরব করেছে কুতুবদিয়ার জনজীবন। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে দ্বীপবাসীর প্রশ্ন, ‘কেন এ দ্বীপের বাসিন্দারা উন্নয়নের কাছ থেকে বঞ্চিত?’। পরিচ্ছন্ন সেতু-মঞ্চনায় রাজনীতিবিদদের প্রতিশ্রুতি থাকলেও বাস্তবতায় রোদ উঠছে— দ্বীপবাসী আর তাঁবুতে বসে থাকবে না। বর্ষাকালে জীবনের ভয়ে কাতরার্ত কুতুবদিয়ার মানুষ এখন সরব কণ্ঠে চিৎকার করছে: “আমরা ফেরি ও স্থায়ী সেতু চাই! স্থায়ী ও টেকসই বেড়িবাঁধ চাই!”।একই সংসদীয় আসনে থেকেও কুতুবদিয়ার অবহেলা স্পষ্ট, তাই আমরা দ্রুত পদক্ষেপ দাবি করছি।


সম্পদ ও সম্ভাবনা:

যদিও কুতুবদিয়া আজ সমস্যাগ্রস্ত, দ্বীপটির উন্নয়ন সম্ভাবনার শেষ নেই। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত ঐতিহাসিক লাইটহাউস দেশের একমাত্র লাইটহাউস হিসেবে খ্যাত। এ ছাড়াও কুতুবদিয়ার লবণক্ষেত্র ও শুটকি মাছ শুকানোর প্রথা বিখ্যাত। সৈকত পর্যটন, জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং সামুদ্রিক মাছ ধরা, লবণ উৎপাদন সঠিকভাবে সংযোজন করলে দ্বীপবাসীর ভাগ্য বদলে যেতে পারে। প্রাকৃতিক এই উপহারগুলো দক্ষ ব্যবস্থাপনায় ব্যবহার করতে পারলে কুতুবদিয়া হয়ে উঠতে পারে দেশের নতুন অর্থনৈতিক কেন্দ্র।


১. দ্বীপটির জনসংখ্যা এবং অর্থনৈতিক গুরুত্ব:

কুতুবদিয়া দ্বীপে প্রায় দুই লক্ষাধিক লোকের বসবাস, যাদের অধিকাংশই কৃষি, মৎস্য চাষ, এবং পর্যটনের সাথে যুক্ত। তবে, যাতায়াতের দুর্বলতার কারণে এই দ্বীপের সম্পদগুলো সঠিকভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। দ্বীপটির জনগণের জীবনযাত্রা উন্নত করতে এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনাগুলো সর্বোচ্চভাবে ব্যবহার করতে যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

২. ব্রিজ নির্মাণের গুরুত্ব:

শর্ট টাইম কমিউনিকেশন: ব্রিজ নির্মাণ হলে কুতুবদিয়া ও চট্টগ্রামের মধ্যে যোগাযোগ অনেক দ্রুত এবং সহজ হবে, যা ব্যবসা-বাণিজ্য এবং জনসাধারণের চলাচলে সুবিধা করবে।

অর্থনৈতিক উন্নয়ন: দ্রুত যোগাযোগের ফলে কৃষি, মৎস্য, এবং পর্যটন খাতের উৎপাদন ও বিক্রি বাড়বে, যা দ্বীপের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে।

সমাজের উন্নয়ন: সড়ক যোগাযোগ উন্নত হলে দ্বীপবাসীদের চিকিৎসা, শিক্ষা, এবং অন্যান্য মৌলিক সেবাও সহজে পাওয়া যাবে, যার ফলে জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে।

৩. ফেরি সার্ভিসের প্রয়োজনীয়তা ব্রিজ নির্মাণের আগে:

কুতুবদিয়ায় ব্রিজ নির্মাণ একটি সময়সাপেক্ষ প্রকল্প হতে পারে, যার জন্য কয়েক বছর লেগে যেতে পারে। কিন্তু, এর মধ্যে যাতায়াতের জন্য একটি ফেরি সার্ভিস অত্যন্ত জরুরি। ফেরি সার্ভিসের মাধ্যমে বর্তমান যোগাযোগের দুর্বলতা দূর করা, কুতুবদিয়া থেকে মূল ভূখণ্ডে যাওয়ার জন্য ফেরি অন্যতম মাধ্যম, যা দ্বীপবাসী ও ব্যবসায়ীদের চলাচল সহজ করবে।

ভ্রমণ সুবিধা: পর্যটকদের কুতুবদিয়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার সুযোগ দিতে ফেরি সার্ভিসের গুরুত্ব অপরিসীম।

নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহন: দ্বীপটির কৃষি ও মৎস্য পণ্য মূল ভূখণ্ডে পাঠানো ও সেসব পণ্য বিক্রি করাটাও ফেরি সেবা দিয়ে সম্ভব হবে।


সরকারের প্রতি আবেদন

সমাজের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া এই অঞ্চলের কথা ভেবে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। কুতুবদিয়ায় স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হোক, স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ হোক, এবং ফেরি পরিষেবা চালু করা হোক। স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা মজবুত করতে আধুনিক হাসপাতাল ও পর্যাপ্ত ডাক্তার ও নার্স প্রেরণ করতে হবে। শিক্ষা ও ব্যবসায়ের সুযোগ সৃষ্টিতে মনোনিবেশ করতে হবে; মৎস্যজীবী, কৃষকসহ সকল নাগরিকের অধিকার রক্ষা করতে হবে। ভাঙন ও জলোচ্ছাস প্রতিরোধে নিরাপদ বাঁধ নির্মাণ এবং বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত করতে হবে। কুতুবদিয়া যদি দেশের মেরুদণ্ড হতে চায়, তবে প্রশাসনের উচিত দেরি না করে এসব দাবি পূরণ করা। এই দ্বীপের মানুষ আর অপেক্ষা করছে না; তাদের অধিকার ও নিরাপত্তা এখনই নিশ্চিত করুন।


কুতুবদিয়া দ্বীপের জীবনসংগ্রাম ও গণতান্ত্রিক অধিকার: রাষ্ট্রের নাগরিক মাত্র রাষ্ট্রীয় সেবা পাওয়ার অধিকারী। প্রত্যেক জনগণের জীবন-নিরাপত্তা রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব। এমনকি একজন ডাক্তার বলেছেন, স্থানীয় প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে যেন দ্বীপবাসী আর কোনো ঝুঁকি নিচ্ছে না। প্রকৃতপক্ষে, কুতুবদিয়া এখন আর অপেক্ষার অবসান; দীর্ঘ দিনের ক্ষুধিত দরিদ্রতার কবলে এই মানুষগুলো সেতু, ফেরির ও বেড়িবাঁধের জন্য উল্লাসপ্রকাশ করছে। এ-আর্তনাদ এখন সারা দেশে বোঝানো দরকার– দ্রুত পদক্ষেপ না-নিলে কুতুবদিয়া হবে আমাদের অগ্নিগর্ভের পরবর্তী দুর্গন্ধময় স্মৃতি।


মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতি আমাদের দাবি:

আমরা আর কাঁদতে চাই না, আমরা উন্নয়ন চাই, নিরাপদ যাতায়াত চাই।

স্থায়ী ও টেকসই প্রান্তিক বাঁধ নির্মাণ করুন।

জরুরিভাবে ফেরি সার্ভিস চালু করুন।

একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন করুন।

কুতুবদিয়ার স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা উন্নয়নে বাজেট বরাদ্দ দিন।

স্থানীয় নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র (সাইক্লোন শেল্টার) ও পানীয় জলের ব্যবস্থা জোরদার করা।

প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক সহায়তার মাধ্যমে স্থানীয় জীবিকার বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তোলা।

উপরোক্ত উদ্যোগগুলো নেওয়া হলে কুতুবদিয়াবাসীর দীর্ঘদিনের বঞ্চনা কাটিয়ে তোলা সম্ভব হবে। সরকারকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে – প্রতিটি ঘর ও প্রাণের নিরাপত্তার জন্য স্থায়ী সমাধান আবশ্যক।

কুতুবদিয়া শুধু একটি দ্বীপ নয়, এটি আমাদের সম্ভাবনার প্রতীক। এটিকে অবহেলার অন্ধকারে নয়, উন্নয়নের আলোয় নিয়ে আসা এখন সময়ের দাবি। কুতুবদিয়াবাসীর এই অনুরোধ, এই আর্তনাদ যেন শোনা হয় – যেন আর কোনো শিশু জন্ম না নেয় মাঝসমুদ্রের ঝুঁকিতে।


বাংলাদেশের উন্নয়নে কুতুবদিয়া দ্বীপের সম্ভাবনা:

১. “ক্লাইমেট স্মার্ট আইল্যান্ড” মডেল (Climate-Smart Island Model) জাতিসংঘ ও বৈশ্বিক উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় কুতুবদিয়াকে "Climate-Smart Island" হিসেবে গড়ে তোলা যেতে পারে। এতে জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো, গ্রিন হাউজ কম কার্বন প্রবাহ, সোলার সিটি প্ল্যান, এবং বায়ু শক্তির আধুনিক ব্যবস্থাপনা অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

ক্লাইমেট রেসিলিয়েন্স মডেল (Climate Resilience Model): কুতুবদিয়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিতে থাকা একটি অঞ্চল। এটিকে ক্লাইমেট রেসিলিয়েন্ট স্মার্ট দ্বীপ হিসেবে গড়ে তোলা গেলে এটি গ্লোবাল রোল মডেল হতে পারে।

২. মাছ চাষ ও সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা (Marine Resources & Aquaculture): বঙ্গোপসাগরের সন্নিকটে হওয়ায় কুতুবদিয়ায় মেরিন ফিশারি জোন গড়ে তোলা সম্ভব। চিংড়ি চাষ, কাঁকড়া চাষ এবং গভীর সমুদ্রের টুনা ফিশিং জাতীয় উদ্যোগ দেশের মৎস্য রপ্তানি বাড়াতে সাহায্য করবে। “ব্লু ইকোনমি” হাব হিসেবে গড়ে তোলা (Blue Economy Hub): সমুদ্রসম্পদ ব্যবহার করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের বড় সুযোগ রয়েছে এখানে। টুনা ফিশিং জোন, মেরিন বায়োটেকনোলজি গবেষণা কেন্দ্র, এবং জলজ পণ্য রপ্তানি শিল্প গড়ে তোলা সম্ভব।

৩. International Maritime Gateway: কুতুবদিয়ার উপকূলকে ব্যবহার করে একটি আন্তর্জাতিক শিপিং চ্যানেল/মিনিবন্দর গড়ে তোলা যেতে পারে। এটি ভারত, মিয়ানমার ও চীনের সঙ্গে মেরিটাইম ট্রেড ও ডিপ্লোম্যাটিক করিডোর হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

৪. Coastal Economic Zone (CEZ): সরকারের ঘোষিত 100 Special Economic Zone (SEZ) এর মধ্যে কুতুবদিয়ায় একটি Coastal Economic Zone গঠন করা হলে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে, শিল্পায়ন ঘটবে, স্থানীয় বেকারত্ব কমবে।

৫. সামরিক ও উপকূলীয় নিরাপত্তা ঘাঁটি (Naval or Coast Guard Base): ভৌগোলিকভাবে কৌশলগত অবস্থানে থাকার কারণে এখানে নৌবাহিনী বা কোস্টগার্ড স্টেশন স্থাপন করা যেতে পারে। এতে সামুদ্রিক নিরাপত্তা, মানব পাচার, মাদক ও জলদস্যুতা প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখা যাবে।

৬. মেরিন রিসার্চ ইনস্টিটিউট ও বিশ্ববিদ্যালয় (Marine Research University): একটি আন্তর্জাতিক মানের সমুদ্র ও জলবায়ু বিষয়ক বিশ্ববিদ্যালয় বা গবেষণা ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা সম্ভব। এতে বিদেশি গবেষক ও শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করে একাডেমিক ডিপ্লোমেসি তৈরি হবে। শিক্ষা ও গবেষণার কেন্দ্র (Research & Education Hub): কুতুবদিয়া জলবায়ু পরিবর্তন, সমুদ্রভূগোল এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য বিশ্বমানের গবেষণা কেন্দ্র হতে পারে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় বা ইনস্টিটিউটের সমুদ্র বিষয়ক শাখা এখানে খোলা যেতে পারে।

৭. আন্তর্জাতিক পর্যটন দ্বীপ (World-Class Tourism Island): মালদ্বীপ বা থাইল্যান্ডের মতো পর্যটন দ্বীপের আদলে উন্নয়ন করলে, বিলাসবহুল হোটেল, রিসোর্ট, ওয়াটার স্পোর্টস, কনফারেন্স ও হানিমুন ডেস্টিনেশন— এগুলোর মাধ্যমে বিদেশি পর্যটক ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব।

পর্যটন ও ইকো-ট্যুরিজম (Tourism & Eco-tourism): কুতুবদিয়ার অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সমুদ্রসৈকত, সূর্যাস্ত, ও সুফি পীর হযরত কুতুব শাহ (র.) এর মাজার — সবই ধর্মীয় ও প্রাকৃতিক পর্যটনের উপাদান। সরকারিভাবে ইকো-ট্যুরিজম জোন ঘোষণা করে উন্নয়ন করলে রাজস্ব আয় ও স্থানীয় জীবনমান উন্নত হবে।

৮. নবায়নযোগ্য শক্তির কেন্দ্র হিসেবে (Hub of Renewable Energy): Wind Power: কুতুবদিয়ায় ইতিমধ্যে বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজ শুরু হয়েছে। এখানে দেশের সবচেয়ে বড় Wind Farm গড়ে তোলা সম্ভব, যা জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে।এতে দেশের জ্বালানি নির্ভরতা কমবে, বিশেষ করে জীবাশ্ম জ্বালানির উপর।

৯. লবণ শিল্পে আধুনিকায়ন ও রপ্তানি (Salt Industry Modernization): কুতুবদিয়া দেশের অন্যতম লবণ উৎপাদনকারী অঞ্চল। লবণ পরিশোধনাগার, প্যাকেজিং ইউনিট, এবং রপ্তানি সুবিধা গড়ে তোলা হলে এটি বিদেশে রপ্তানিযোগ্য পণ্যতে পরিণত হতে পারে। স্থানীয়দের কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটবে।

১০. ছোট বন্দর বা বাণিজ্য কেন্দ্র গড়ে তোলা (Mini Port or Trade Hub): দ্বীপের অবস্থানগত গুরুত্ব ব্যবহার করে এখানে একটি ছোট বন্দর বা নদীবন্দর স্থাপন করা গেলে আন্তঃজেলা পণ্য পরিবহন সহজ হবে। এতে চট্টগ্রাম বন্দরের উপর চাপ কমবে এবং আঞ্চলিক ব্যবসা বাড়বে।


কুতুবদিয়া দ্বীপ কেবল একটি ভৌগোলিক অঞ্চল নয়, বরং এটি হতে পারে বাংলাদেশের পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি, অর্থনীতি, নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও কূটনীতির যুগান্তকারী কেন্দ্রে। এটি হতে পারে বাংলাদেশের শক্তির উৎস, অর্থনীতির চালিকাশক্তি, এবং প্রাকৃতিক ও টেকসই উন্নয়নের প্রতীক।