সুপ্রিম কোর্টের রায়ের তথ্য গোপন করে উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তার যোগসাজসে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায় বাংলাদেশ রেলওয়ের সরকারি জমি বিক্রি করে নামজারি করার পাঁয়তারা করছিল একদল ভূমিদস্যু

সুপ্রিম কোর্টের রায়ের তথ্য গোপন করে উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তার যোগসাজসে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায় বাংলাদেশ রেলওয়ের সরকারি জমি বিক্রি করে নামজারি করার পাঁয়তারা করছিল একদল ভূমিদস্যু। সরিষাবাড়ী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয় ও স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, সরিষাবাড়ী পৌরসভার শিমলা গোপীনাথ মৌজার খতিয়ান নং ৩২৬ এর দাগ নং ১১৯৭ জমির পরিমাণ ১ একর ২১ শতাংশ। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ রেলওয়ের সরকারি এলাকাবাসী পুকুর হিসেবে ব্যবহার করে আসছিলেন । উক্ত ভূমি কামরাবাদ ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের তৎকালীন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা গোলজার হোসেন ও তানিয়া আক্তার অর্থের বিনিময়ে সরকারি ভূমি ব্যক্তি নামে নামজারি করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। সরকারি ভুমিটি স্থানীয় পৌরসভার কবুলীবাড়ির মৃত তছের উদ্দিন সরকার জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বাংলাদেশ রেলওয়ের ভূমি গ্রাস করতে ১ একর ৯০ শতাংশ ভূমি দখল করেন। এক পর্যায়ে তছের উদ্দিন সরকারের ছেলে সুলতান মাহমুদ সরকারি ভূমি একটি আবাসন কোম্পানির লোকজনের নিকট তথ্য গোপন করে প্রায় ৫ কোটি টাকার সম্পত্তি ২ কোটি টাকার ভূমি রেজিস্ট্রি মূলে বিক্রি করেন। ওই বিক্রিত ভূমি প্লট আকারে সাজিয়ে বিক্রির প্রক্রিয়া চলছিল । উক্ত ভুমির নামজারি জমা খারিজ মামলা নং ৩৮৮৭ (ঢ-১)/২০২৩-২৪-এর কাগজপত্রে বিআরএস/হাল ৩৯৬ নং দাগের সাবেক দাগ নং ৩৬১ ও ৩৬৪ উক্ত দাগের জমি নিয়ে দলিলদাতা সুলতান মাহমুদ তার পিতা তছের উদ্দিন সরকার ১৯৯৫ ইং সালের কলিকাতার গেজেট এলএ ৭ / ১৯৩৯-৪০ নং কেস বাতিল করার জন্য জামালপুর প্রথম আদালতে ৩৭৪/৯৭ নং মোকদ্দমা করলে আদালত দলিলদাতা সুলতান মাহমুদ তার পিতা তছের উদ্দিন সরকার এর পক্ষে রায় দেন। উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতে রিভিউ করলে বিজ্ঞ আদালত তছের উদ্দিন সরকারের বিরুদ্ধে রায় দেন। উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে ১৯৯৮ ইং সালে তছর উদ্দিন সরকার মহামান্য হাইকোর্টে ৩৭৪/১৯৯৭ নং সিভিল রিভিশন করলে মাননীয় বিচারপতি রেলের পক্ষে রায় দেন। রায়ের বিরুদ্ধে ১৯৯৮ সালে তছের উদ্দিন সরকার মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ করলে মাননীয় বিচারপতিগণ তছের উদ্দিন সরকারের রিভিউ খারিজ করে দেন, রিভিউ নং ৮০০। এ দিকে দাখিল কৃত নামজারীর জমা খারিজটি না মঞ্জুর করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও প্রশাসনের কাছে স্থানীয় এলাকাবাসী দাবি জানান । এ ব্যাপারে রেলের ক্রয় সূত্রে মালিক জাহিদ হোসেন বলেন, আমি সঠিক কাগজপত্র দেখে ক্রয় করেছি। কোন তথ্য গোপন করলে আমি সে বিষয়ে কিছু জানিনা। পরবর্তীতে ওই নামজারির আবেদনটি কামরাবাদ ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি উন্নয়ন কর্মকর্তা জুয়েল হক আকন্দের সঠিক তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপনের ফলে জমা খারিজের আবেদনটি নামঞ্জুর অর্থাৎ বাতিল হয়ে যায়। নামঞ্জুরের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সুমী আক্তার ( রাজস্ব) জামালপুর বরাবরে আবেদন করলে বিষয়টি বিচার বিশ্লেষণ করে আপিলের আবেদন গত ০৭-০৪-২৪ ইং তারিখে ১১৬ নং স্মারক মূলে বাতিল করে দেন। এহেন পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রায় ৫ কোটি টাকা মূল্যের এক একর ৯০ শতাংশ জমি ভূমিদস্যুদের হাত থেকে রক্ষা করায় এলাকাবাসী ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি উন্নয়ন কর্মকর্তা জুয়েল হক আকন্দ সহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিজা রিছিল বলেন, সরকারি সম্পত্তি যাতে বেহাত না হয় সে বিষয়ে সবারই সততা মাধ্যমে সঠিক কার্যক্রম গ্রহণ করা উচিত। তিনি আরও বলেন,এখন থেকে ওই ভূমিতে ব্যক্তি মালিকানার আর কোন অধিকার থাকলো না বলে জানান।