অভিযোগকারী পক্ষের বক্তব্য যাচাই করে দেখা গেছে, এ ঘটনার পেছনে স্থানীয় জমি সংক্রান্ত দীর্ঘদিনের বিরোধ এবং পুলিশের মাদকবিরোধী অবস্থানের কারণে ক্ষুব্ধ একটি চক্রের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট মামলার নথি, প্রত্যক্ষদর্শীদের পুনরায় বক্তব্য এবং পুলিশের তদন্ত রিপোর্ট পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ৭ এপ্রিল মধ্যরাতে উপজেলার করমুডাঙ্গা এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযানের সময় মামুন নামের ব্যক্তি পুলিশ দেখে পালিয়ে যায় এবং ফেলে রেখে যায় কালো ব্যাগে থাকা ৬০০ পিস ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট। এরপর নিয়মমাফিক জব্দ তালিকা প্রস্তুত করে পুলিশ তার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে।
পরবর্তীতে আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা অনুযায়ী চলতি জুলাই মাসের ৫ তারিখ মামুনকে তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। অথচ ঘটনার তিন মাস পর একটি স্থানীয় সংগঠনের নাম ব্যবহার করে পুলিশকে অভিযুক্ত করে সংবাদ প্রকাশ করা হয়, যেখানে অভিযোগকারী হিসেবে উঠে আসেন মামুনের স্ত্রী ও পিতা।
প্রাথমিকভাবে পুলিশের পক্ষ থেকে মামলার তালিকায় আসামী মামুনুর রশিদের পিতা তাইজুল ইসলাম তাজেল ও স্ত্রী শামসুন্নাহার—প্রকাশিত সংবাদে জানায়, প্রতিপক্ষের কাছে থেকে মোটা অংকের বিনিময় মামুনকে ফাঁসানো হয়েছে। কিন্তু অনুসন্ধানে তাদের বক্তব্যে অসঙ্গতি পাওয়া গেছে।
মামুন রশিদের পিতা তাইজুল ইসলাম তাজেল বলেন, আলমের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিন জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। এলাকায় আলমই আমাদের একমাত্র শত্রু। আমাদের ছেলেকে সেই আলম যড়যন্ত্র করে ফাঁসিয়েছে বলে আমরা মনে করছি। আমরা জানি আমাদের ছেলে খুব ভালো সে কোনোদিন সিগারেটও খায়নি।
মামুন রশিদের স্ত্রী শামসুন্নাহার বলেন, জমি নিয়ে একটু ঝামেলা আছে আমার চাচা শশুর আলমের সাথে। সে ছাড়া আমাদের আর কোনো শত্রু নাই। আমার ধারণা হয়ত বা সে আমার স্বামীকে ফাঁসিয়েছে। তাঁর অভিযোগের পক্ষে এবং ওসি আব্দুল আজিজ বা অন্য কোনো পুলিশ সদস্যকে টাকা দিয়ে মামলায় ফাঁসানোর বিষয়ে উপযুক্ত কোনো তথ্য বা প্রমান আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো তথ্য প্রমান নাই তবে, আমরা ধারণা করছি।
পাড়াতী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তারিকুল ইসলাম বলেন, আমি যা জানি, এপ্রিল মাসে মামুনের বিরুদ্ধে একটি মাদক মামলা হলে পরবর্তীতে ওয়ারেন্ট বের হয়, পরে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়। আলম ত সেরকম কোন প্রভাবশালী নয় যে টাকা দিবে। ওসি সাহেব এটা টাকা নিয়ে বা টাকার বিনিময় করছে এটা আমার জানা নাই, আমার ধারণা একটি চক্র এটা নিয়ে কাজ করছে। ওসি সাহেব ভালো মানুষ। উনি কোনোদিন কারো কাছে দশ টাকা নিয়েছে এটা আমার জানা নাই।
এবিষয়ে আলম মৌলভীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, “এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমি এই পরিবারের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জমি নিয়ে আইনি বিরোধে রয়েছি ঠিকই, কিন্তু কোনো সময় পুলিশ বা ওসির সঙ্গে কোনো তদবির করিনি। আমি কোনোদিন থানাতেই যায়নি। আমার সাথে শত্রুতা থাকায় মামুনকে গ্রেফতারের বিষয়ে আমাকে দোষারোপ করা হচ্ছে। এব্যপারে আমি কিছুই জানিনা। ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত হোক।”
সাপাহার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল আজিজ বলেন, “মামুনের বিরুদ্ধে মাদক মামলার প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ আইনি। সীমান্তবর্তী করমুডাঙ্গা একটি মাদকপ্রবণ এলাকা। আমাদের মাদকবিরোধী তৎপরতার কারণে কিছু অসাধু ব্যক্তি ক্ষুব্ধ হয়ে থানা পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে নানা রকম ষড়যন্ত্র করছে। মামুনের বিরুদ্ধে আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল, আমরা কেবল সেটি কার্যকর করেছি। কলমুডাঙ্গা মানব কল্যাণ সংগঠনের কিছু লোকজন মাদক ব্যবাসায়ীদের পক্ষে তদবির করে সুবিধা করতে না পেরে এলাকায় পুলিশি তৎপরতা বন্ধ করতে থানা পুলিশের বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র লিপ্ত হয়েছে। মামুন কে গ্রেফতার করা হলে আমাকে সহ থানা পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যা বানোয়াট সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচার করে পুলিশকে হেয়প্রতিপন্ন করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সূত্র মতে, গত জানয়ারী/২৫ হতে এ পর্যন্ত শুধুমাত্র করমুডাঙ্গা এলাকাতেই ১৪টি মাদক মামলা রুজু হয়েছে এবং অনেক সক্রিয় চক্র বর্তমানে পুলিশের তৎপরতায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় প্রতিশোধমূলকভাবে পুলিশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। অপ্রচারকারীরা বিভিন্ন মামলায় জড়িত বলে জানা যায়।
মাঠ পর্যায়ে অনুসন্ধান, পুলিশের ব্যাখ্যা এবং স্থানীয়দের মতামতের ভিত্তিতে স্পষ্ট হয়—মামুনকে কেন্দ্র করে পুলিশকে দায়ী করার চেষ্টার পেছনে রয়েছে জমি নিয়ে বিরোধ এবং একটি সক্রিয় মাদক চক্রের ষড়যন্ত্র। প্রকৃত ঘটনা ওসির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের পেছনের উদ্দেশ্য ও প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।