মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৬ বছরের কিশোর বালিয়াকান্দি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের শহিদনগর গ্রামের এন্তাজউদ্দিন খানের ছেলে মো. আবুল হোসেন খান। গ্রামের স্কুলে পড়ালেখা করতেন। যুদ্ধের শুরুতে পাকিস্তানি সেনারা গ্রামে ঢুকে সাধারণ মানুষের ওপর জুলুম-নির্যাতন শুরু করে। একবার তাকেও ধরে নিয়ে যায় পাকবাহিনীর পক্ষের শান্তি কমিটির সদস্য আবদুল গফুর মোল্লা।
নির্যাতন করে টাকা নিয়ে মুক্তি দেয় তাকে। এতে মনে দাগ কাটে আবুল হোসেন খানের। পকিস্তানিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরার সিদ্ধান্ত নেন। সমবয়সী ১০ থেকে ১৫ জনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
অনেকেই কথা দেন যুদ্ধে যাবেন। কিন্তু মে মাসের মাঝমাঝি মধ্য রাতে বাড়ি থেকে পালিয়ে যুদ্ধে যাওয়ার সময় সঙ্গী ছিলেন মাত্র পাঁচজন। তার আশা, ‘বাংলাদেশ একদিন বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে, শহীদ জিয়ার স্বপ্নের সবুজ বাংলা হবে। ’ ৫৩ বছর আগের স্মৃতিচারণ করে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন খান বলেন, ‘বাড়ি থেকে রাত সাড়ে ১২টার দিকে ১৫০ টাকা নিয়ে যুদ্ধের জন্য বের হই।বাড়ির কাউকেই জানাইনি। বালিয়াকান্দির নারুয়া খেয়াঘাট দিয়ে লাঙ্গবাঁধ হয়ে শিকারপুর সীমান্ত অতিক্রম করে কল্যাণী চলে যাই। সেখানে ১০ থেকে ১৫ দিনের মতো ছিলাম। এরপর সেখান থেকে ভারতের চাকুলিয়া ক্যাম্পে যাই। সেখানে ৩০ দিনের প্রশিক্ষণ শেষে রাজবাড়ী ফিরে আসি।দেশে আসার পর স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা যারা আগে থেকেই যুদ্ধরত আবদুল হান্নান মাস্টার, মোকলেসুর রহমান দুলাল ও আকবরের সঙ্গে যোগ দিই। আমরা তৎকালীন বহরপুর থানা থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করি। জামালপুর রেলব্রিজ থেকে পাকসেনাদের অস্ত্র লুটে নিই। ১৪ ডিসেম্বরের পর যুদ্ধের গতি বেড়ে যায়। এরপর ১৬ তারিখে দেশ স্বাধীন হয়। ’ তিনি আরও বলেন, দেশ স্বাধীন হয় ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজবাড়ীর অবাঙালি বিহারিরা ঘোষণা দেন সারা দেশ স্বাধীন হলেও রাজবাড়ী পাকিস্তানের অধীনে থাকবে। আবার যুদ্ধের জন্য রাজবাড়ী চলে যাই। আমাদের সঙ্গে মাগুরা, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধারা যোগ দেন। সবাই মিলে বিহারিদের সঙ্গে আরেকবার সশস্ত্র যুদ্ধ করি। রাজবাড়ী মুক্ত হয় ১৮ ডিসেম্বর। রণাঙ্গনের এই মুক্তিযোদ্ধা গরুর খামার গড়ে তুলেছেন। তাঁর আশা, ‘বাংলাদেশ একদিন বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে, শহীদ জিয়ার স্বপ্নের ।