ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট থানার দক্ষিন মনিকুড়া গ্রামে অবস্থিত যুবলীগ নেতা লিয়াকত আলী মন্ডল এর
বাড়ির ‘টুকিয়ার খালপাড় বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়’ নামক স্কুলটি এখন মাদকসেবীদের আখড়ায় পরিণত
হয়েছে।
বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ ও শ্রেণিকক্ষে দিনরাত সমানতালে কিশোর গ্যাং এবং বখাটেদের আড্ডা, মাদক সেবন ও
কেনাবেচা চলে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার বিকালে সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, শ্রেণিকক্ষের দরজা জানালা ভাঙা। স্কুলের ভিতরে মাত্র
২টি বসার ব্রেঞ্চ ছিল, সেখানে ৪জন বসে ইয়াবা ও গাজা সেবন করছে, যারা যুবলীগ নেতা লিয়াকত আলী
মন্ডলকে বিভিন্ন কাজে সহযোগীতা করে থাকে। পরে তারা সাংবাদিক দেখে বের হয়ে যায়। শ্রেণিকক্ষে
ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে মাদক গ্রহণের সুই-সিরিঞ্জসহ নানা সরঞ্জাম।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা পাগলপাড়ার বাসিন্দা উম্মে মাকসুরা বলেন, করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে
বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ হয়। এ সুযোগে বখাটেরা বিদ্যালয়ের দরজা জানালা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে মাদক সেবন
করে। বিদ্যালয়ের জমির মোলিক যুবলীগ নেতা লিয়াকত আলী মন্ডলের বড় ভাই ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রী এই
স্কুলের শিক্ষিকা, তাদের বাড়ির আঙ্গিনাতেই স্কুল। তারা যদি কোন ব্যবস্থা না নেয় তাহলে আমি দূর থেকে
কি করব?
যুবলীগ নেতা লিয়াকত আলী মন্ডলের বড় ভাই রফিক মন্ডল বলেন, আমার ছোট ভাই আওয়ামীলীগ নেতা, আমি
সাধারণ একজন কৃষক। আমার কথা কেউ দাম দেয় না, স্কুলে আমার স্ত্রী পড়াইত, স্কুলের জায়গাটা আমার
বাবার। আমি বছরখানেক আগে একদিন স্কুলের এইখানে মেয়েদের পেডিকোড পাইছি, বিভিন্ন নেশা জাতীয়
দ্রব্যের খোল পাইছি, আমি এইটা নিয়ে থানায় একটা জিডিও করছি। এখন এলাকার নেশাখোর পোলাপান আমাকে
মানে না, তারা প্রতিদিন দিনে রাতে এইখানে মদ, গাজা, ইয়াবা খায় স্কুল ঘরটার ভিতরে বসে। সব দরজা,
জানালা, পড়ার ব্রেঞ্চ সবকিছুই নেশাখোর পোলাপান ভেঙে ফেলেছে। আমি কিছু বললে আমার কৃষি জমির ফসল
নষ্ট করে ফেলে, আমাকে মারতে আসে। প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া এইটা বন্ধ করা সম্ভব না আমার মতে।
বিদ্যালয়ের কার্যকরী কমিটির সভাপতি নুরুল আমিন বলেন করোনার পর থেকে ক্লাস করানো বন্ধ করা হয়।
বিদ্যালয়ে ৪জন শিক্ষিকা ছিলো। বিদ্যালয়টি আওয়ামীলীগ আমলে সরকারীভাবে রেজিষ্টার করার চেষ্টা করা
হয়েছিল কিন্তু তা সম্ভব হয় নি। তারপর থেকে শিক্ষকদের স্কুলের প্রতি অনাগ্রহ তৈরী হয়েছে। দীর্ঘদিন
স্কুল বন্ধ থাকায় স্কুলের ভিতর বখাটেরা দিনে রাতে মাদকসেবন করে। কেউ কিছু বলে না তাদের। মাদকসেবনে
বাধা দিলে কিশোর গ্যাংয়ের পোলাপান বিভিন্ন হুমকি দামকি ভয় ভিতি দেখায়। প্রশাসনের সহযোগিতা পেলে
স্কুলে মাদকের আস্তানা ভেঙ্গে দেওয়া যাবে।
উল্লেখ্য যে, ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই যুবলীগ নেতা এই মাদকসেবী কিশোর গ্যাংদের
নিয়ে মনিকুড়া কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থী জুয়েল আরেং এর পক্ষে ২২০০ ব্যালট পেপারে জাল ভোটের সীল মারে,
যাহা হালুয়াঘাটে সর্বোচ্চ জাল ভোট বলে স্বীকৃতি পেয়েছিল।