বাংলাদেশের প্রভাবশালী ধর্মীয় সংগঠন হেফাজতে ইসলাম আজ অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার দ্বন্দ্বে উত্তাল

বাংলাদেশের প্রভাবশালী ধর্মীয় সংগঠন হেফাজতে ইসলাম আজ অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার দ্বন্দ্বে উত্তাল। অভিযোগ উঠছে, একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী ("সিন্ডিকেট") সংগঠনটিকে রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত করতে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী নেতৃত্বকে হটিয়ে ঢাকাকেন্দ্রিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছে। এই সংকট হেফাজতের অস্তিত্বকেই প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।  

১. চট্টগ্রাম vs ঢাকা, নেতৃত্বের মেরুকরণ
হেফাজতের জন্ম চট্টগ্রামের মাটিতে, কিন্তু এই গোষ্ঠী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়া ঢাকায় স্থানান্তর করতে বদ্ধপরিকর। উদ্দেশ্য? চট্টগ্রামের উলামায়ে কেরামের প্রভাব কাটিয়ে রাজধানীভিত্তিক একটি নতুন নেতৃত্ব গড়া। এতে হেফাজতের আঞ্চলিক শিকড় ও ধর্মীয় ভাবমূর্তি ঝুঁকিতে পড়েছে।  

২. উলামায়ে কেরামের প্রতি অবমাননা
চট্টগ্রামের ধর্মীয় নেতারা হেফাজতের প্রাণ। কিন্তু  ঢাকার ক'জন উড়ে এসে জুড়ে বসা  সিন্ডিকেট তাদের পরামর্শ ও নৈতিক নেতৃত্বকে সরিয়ে রেখে একক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছে। ফলাফল? সংগঠনের অভ্যন্তরে বিভেদ, ক্ষোভ এবং আদর্শিক বিভ্রান্তি শুরু হয়েছে ।  

৩. আমীরের কর্তৃত্বে ফাটল
সংগঠনের সর্বোচ্চ নেতা আমীরে হেফাজতের সিদ্ধান্তও এই গোষ্ঠী মানছে না। সমান্তরাল ক্ষমতা কাঠামো গড়ে তারা সংগঠনের নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছে। এভাবে হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ধ্বংসের পথে।  

৪. রাজনীতির বলি হেফাজত?
বিশ্লেষকদের ধারণা, এই গোষ্ঠীর লক্ষ্য হেফাজতকে ধর্মীয় আন্দোলনের চেয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার হাতিয়ার বানানো। এবং তারা হেফাজতকে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে যাচ্ছে ফলে সাধারণ সমর্থকদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে, সংগঠনের মূল লক্ষ্য—ইসলামী মূল্যবোধ রক্ষা—ঝুঁকিতে পড়েছে।  

কী হবে হেফাজতের ভবিষ্যৎ?
এই সংকটের সমাধান না হলে হেফাজতের ঐক্য ভেঙে যাওয়ার শঙ্কা প্রকট। প্রয়োজন নেতৃত্বের স্বচ্ছতা এবং উলামায়ে কেরামের জরুরি হস্তক্ষেপ। এ ছাড়া, সমর্থকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করে সংগঠনকে রাজনৈতিক চক্রান্ত থেকে রক্ষা করতে হবে।  

হেফাজতের বর্তমান সংকট শুধু ক্ষমতার লড়াই নয়, এটি ধর্মীয় আন্দোলনের ওপর রাজনৈতিক দখলদারিত্বের প্রয়াস। টিকে থাকতে হলে সংগঠনকে ফিরে যেতে হবে তার মূল উদ্দেশ্যে—নিঃস্বার্থ ধর্মীয় চেতনা ও জনসমর্থনের ভিত্তিতে। নতুবা, ইতিহাসের পাতায় এটি আরেকটি ব্যর্থ প্রয়াস হিসেবেই থেকে যাবে।