২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলাদেশে সংঘটিত গুম, খুন, ধর্ষণ, নির্যাতন, হয়রানি এবং অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে সরকার একটি উচ্চ পর্যায়ের স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনের নির্দেশ দিয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন সোমবার বাংলাদেশ গেজেটে প্রকাশ করা হয়।

গেজেট অনুযায়ী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনসমূহ, বিরোধী রাজনৈতিক দল, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, পেশাজীবী, সাংবাদিক, লেখক, শিক্ষক, ছাত্র, সমাজকর্মী, মানবাধিকারকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের ওপর সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো এই কমিশনের আওতায় আসবে।

সরকার মনে করছে, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত ঘটনা নিয়ে দেশে এবং বিদেশে মানবাধিকার প্রশ্নে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে বিরোধী দল ও ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর নির্যাতন, গুম, খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যার অভিযোগের ব্যাপারে দেশ-বিদেশের মানবাধিকার সংস্থা এবং জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। এসব প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

গেজেটে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠায় এই কমিশনের কার্যক্রম সহায়ক হবে। কমিশনকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সাক্ষ্য-প্রমাণ যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে সত্য উদ্ঘাটনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী যারা দায়ী প্রমাণিত হবেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সেইসঙ্গে, সরকারের পক্ষ থেকে এই উদ্যোগের মাধ্যমে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে একটি জবাবদিহিমূলক প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক কাঠামো গড়ে তোলার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।

কমিশন কতদিনের মধ্যে কাজ শেষ করবে, কারা এই কমিশনের সদস্য হবেন বা কবে থেকে এর কার্যক্রম শুরু হবে— সে বিষয়ে এখনো বিস্তারিত জানানো হয়নি। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, কমিশন যেন নিরপেক্ষতা, পেশাদারিত্ব এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড অনুসরণ করে কাজ করে— সেই নিশ্চয়তা দিতে চায় সরকার।

এই গুরুত্বপূর্ণ প্রজ্ঞাপনে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্বাক্ষর করেন সিনিয়র সচিব মো. মাশফিক গনি।