৫ আগস্ট ২৪ এর পর থেকেই সেনাপ্রধানের বেশ কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কথা দেশবাসীর গোচরে আসে, যার কারণে সেনা প্রধান ও তার অনুসারীদের বিষয়ে জনমনে একটি বিরূপ অনুভূতির জন্ম নেয়। এর বহিঃপ্রকাশ হয় যখন সেনা প্রধান আওয়ামী লীগের ভালো নেতৃত্ব কে সামনে এনে ভালো আওয়ামী লীগ বানানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেন। একই সাথে অন্তর্ভুক্তী মূলক নির্বাচন বলতে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণে নির্বাচন হওয়া কে বোঝান। এর প্রেক্ষিতে ছাত্র সমন্বয়করা তাদের মধ্যকার অনানুষ্ঠানিক বৈঠক এর আলোচিত বিষয় জনগণের সামনে প্রকাশ করে দেন। এতে করে কোনো কোনো মহল মনে করেন যে সমন্বয়কদের সাথে সেনাবাহিনীর দুরত্ব তৈরি হয়েছে। আর পার্শ্ববর্তী দেশের হুজুগ মিডিয়ার প্রোপাগান্ডা তো রয়েছেই।
যাতে করে দেশে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়েও একটি বার্তা ছড়িয়ে পড়ে যে - "দেশে কি সেনাবাহিনী জরুরী অবস্থা জারী করার মাধ্যম শাসন ভার নিজদের কব্জায় নিয়ে নিচ্ছে "। দুই দিনের জল্পনা কল্পনার পরে সেনা প্রধান তার সকল কর্মরত অফিসারদের সঙ্গে সভা করেন। সেখান থেকে দেখা যায় যে দেশপ্রেমের চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করে তিনি সকল বাহিনীর সদস্যদেরকে দেশপ্রেমের বলে বলীয়ান হয়ে দেশকে রক্ষায় সর্বোচ্চ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।
সৃষ্টিকর্তার অপার কৃপায় এবারের মতো দেশের ভাগ্যাকাশ থেকে ঝড়-বাদল বিদায় নিয়েছে আশা করা যায়। আমরা বর্তমান সরকার প্রধান, সেনা প্রধান ও অন্যান্য দায়িত্বশীল দের সক্রিয় ও দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকার মাধ্যমে দেশের দ্রুত উন্নতির আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
সেনাপ্রধানের মিটীং এ উপস্থিত ছিলেন এমনএকজন মধ্যম সারির অফিসার এর অনুভূতি, যা হৃদয় ছুঁয়ে যায় -
চীফ মানুষটা একদম ভালোনা। রাগ, অভিমান, ক্ষোভ, ঘৃণা সবকিছুকে একদম ম্লান করে ফেলে। গত কয়েকদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিষোদগার শুনে শুনে কাজের স্পৃহা একদম হারিয়ে ফেলেছিলাম। বারবার ভাবছিলাম, কেনও করবো? কি হবে করে? কার জন্য করবো? পরিবারকে সবটুকু সময় দিলাম। এর মাঝে আদেশ পেলাম যে আজকে সেনাপ্রধান সকল অফিসারকে এড্রেস করবেন। কি কি বলবেন, কি হতে যাচ্ছে তার মোটামুটি একটা ধারনা সোশ্যাল মিডিয়ায় পেয়েও গেলাম। যাই হোক, আজ অফিসার এড্রেস থেকে ফিরে মনে হলও ডিউটিতে যাওয়ার আগে আজ কি বললেন সেনাপ্রধান জানিয়ে দেই সবাইকে। ঠিক করছি কিনা জানিনা, এই অফিসিয়াল সিক্রেট বলার পেছনে আমার অবশ্য একটা যুক্তি আছে। সবশেষে সেটা বলবো, তার আগে বলি কি হলও আজকে।
১। চীফ প্রথমেই সবাইকে ধন্যবাদ দিলেন সেনাবাহিনীর সবাইকে নিরলসভাবে এখন পর্যন্ত কাজ করার জন্য। তিনি বিশ্বাস করেন দেশ ও জাতি আমাদের এই অবদান আজীবন কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করবে। তিনি সবাইকে ধন্যবাদ দিয়েছেন যে এতো প্রভোকেশনের পরেও যে আমরা দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি সেজন্য। বললেন *রিএ্যাক্ট করোনা*। *নবীর হাদিসে আছে রাগকে দমন করতে হয়*। আমি ভেবে পাইনা উনি এতো কিছুর পরও উনার মধ্যে কোন রাগ নাই, অভিযোগ নাই! বললেন *আমাদের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হওয়া যাবেনা। আমাদের দায়িত্ব দেশে স্ট্যাবিলিটির মাধ্যমে দেশে জনগনের নির্বাচিত সরকার ব্যবস্থা আনাতে সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করা*।
২। দেশ এবং সেনাবাহিনীর আইন ও নিয়মনীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া ও মেনে চলা। দেশ ও জাতির সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা। বললেন *মনে রাখবা এটা করতে পারাই আমাদের বিজয়। আর এই কাজ করবা সততা, পরিশ্রম, প্রত্যয় ও সহনশীলতার সাথে*।
৩। চিফ বললেন *কোন প্রকার প্রভোকেশনে রিএ্যাক্ট করোনা। আমার সৈনিকদেরও বলবে এই কথা। প্রজ্ঞা দিয়ে কাজ করো। দেশ ও জাতি আমাদের কাছে অনেককিছু প্রত্যাশা করে। আর সেটা রক্ষা করা আমাদের পবিত্র দায়িত্ব*। আমি জানিনা, এতো সহনশীলতা উনি কথা থেকে পান।
৪। ইউএন'র সেক্রেটারী জেনারেল সেনাপ্রধানের সাথে সাক্ষাতে ইউ এন মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবদানের জন্য ভূয়সী প্রসংশা সহ ধন্যবাদ জানিয়েছেন। একি সাথে ০৫ আগস্ট ২০২৪ এ দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে সেনাবাহিনীর অনন্য ও পেশাদারী ভুমিকার প্রশংসাও করেন।
৫। সেনাপ্রধান বলেন, *অস্থিতিশীল কোন পরিস্থিতিই দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবেনা। আমাদের মনে রাখতে হবে গনতন্ত্রই আমাদের শেষ ভরসা। আর এই গনতন্ত্রে যিনি নেতা নির্বাচিত হবেন তিনি এই দেশের জন্যই কাজ করবেন। আমাদের সবাইকে দল মত, ধর্ম, বর্ণ ও পেশাভেদে একসাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে*। আমি ভেবে অবাক হই, বাইরে সবাই উনাকে কি ভাবেন, আর উনি আসলে কি!
৬। এরপর চিফ বললেন সেনাবাহিনীর মধ্যে একতা নিয়ে। আর সবচেয়ে আবেগাপ্লুত হয়েছি এখানে এসেই। তিনি বললেন, *তোমরা সবাই এক থেকো। মনে রাখবা, আমরা যদি এক থাকি, আমাদের ক্ষতি কেউ করতে পারবেনা। আর আমাদের ক্ষতি যদি কেউ না করতে পারে তাহলে আই দেশ ও জনগনের ক্ষতিও কেউ করতে পারবেনা। আমরা সবাই মিলে এই সময়কে সেনাবাহিনীর ইতিহাসে সবচেয়ে উজ্জ্বল সময় বানাবো। তোমরা শুধু সৎ থেকো আর সুবিচার করো। দেশ ও জাতি সবার আগে। আমি বিগত বছরগুলোর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পরিসংখ্যান নিয়ে দেখেছি এখন পরিস্থিতি অনেক ভালো আছে এবং আমাদের আরও ভালো করতে হবে। যদিও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সাইকলজিকাল ইস্যু আমাদের জনগণকে মাঝে মাঝেই আতংকিত করে। এটাকে ম্যানেজ করাও আমাদের দায়িত্ব* হায় সেলুকাস! বাইরের মানুষ উনাকে নিয়ে কি ভাবেন, আর আমরা কি দেখি। বিশ্বাস করুন, এক বিন্দু বানিয়ে বলছিনা।
৭। এরপর সেনাপ্রধান সবাইকে বললেন, *তোমরা কোন কাজে যাওয়ার আগে জেনে বুঝে নেবে কি করতে যাচ্ছ, ঠিক না ভুল। এক্ট ডিসিসিভ। যেখানেই যাবা, কাজ করবে*।
৮। চিফ বলেন, *আমরা আহত ছাত্রদের সাপোর্ট করছি। তাদেরকে আমরা সারাদেশের সকল সিএমএইচ’এ বিনামুল্যে চিকিৎসা ও ঔষধ সহ আর্থিক সহায়তা করেছি। খুব শীঘ্রই ৭২ জনকে বড় অংকের আর্থিক সহায়তা করবো। গতকাল আমরা তাদের সাথে ইফতার করেছি ঢাকা'তে। এভাবে সকল ডিভিশনেও ইফতারের আয়োজন করা হবে। আমরা সবাই তাদের যত্ন নেবো, তাদের কাজকে রিকগনাইজ করবো*। আমি ব্যক্তিগতভাবে চিফের এই প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই। ওদের জন্য এই জাতির এখনও অনেক কিছু করার বাকী।
৯। সেনাপ্রধান এরপর ১০ পদাতিক ডিভিশন'কে ইউএন'র সেক্রেটারী জেনারেল এর রোহিঙ্গাদের সাথে সফল বিশাল ইফতার অনুষ্ঠান আয়োজন করার জন্য ধন্যবাদ জানান।
১০। চিফ জানান, *অবসরপ্রাপ্তদের আবেদনের ভিত্তিতে আমরা একটা রিভিউ বোর্ড করেছি। সেখান থেকে বোর্ডের সুপারিশের ভিত্তিতে তাদের জন্য প্রোমোশনসহ ১৫০ কোটির মত কম্পেনসেশন প্রপোজ করেছি। আমি আশাবাদী যে এই কম্পেনসেশন সরকার গুরুত্বের সাথে বিচার করে অনুমোদন দেবেন*।
১১। সত্যি বলতে কি আমি ব্যক্তিগতভাবে সেনাপ্রধানের ধৈর্য দেখে অবাক হই। এতো প্রোপাগান্ডা আর গুজবের মাঝেও তিনি এতটা ঠান্ডা থাকেন কিভাবে! তিনি বলেন, *ডিজইনফরমেশন, মিসইনফরমেশন, প্রোপাগান্ডা আর গুজব হতেই থাকবে। তোমরা ইউনাইটেড থেকো। মনে সংশয়, অনুমান, সন্দেহ রেখোনা। যদি কোনও কিছু নিয়ে সংশয় হয়, কমান্ডের কাছে ক্ল্যারিফিকেশন চাইবে। আমার সৈনিকদেরও একি কথা জানিয়ে দেবে। আমরা নিয়মের মধ্যে থেকে কাজ করবো। আমি তোমাদের বলে দেবো কি করতে হবে। কিভাবে করবে তা তোমারা তোমাদের প্রজ্ঞা দিয়ে করবে। কাজ করার সময় আন্ডারকমান্ডকে ফ্লেক্সিবিলিটি দেবে"।
১২। সবশেষে সেনাপ্রধান বলেন, *আমরা একটা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আল্লাহ যেকোনো সংকটে ধৈর্য ধারন করে কাজ করে যেতে বলেছেন। আমি চাই তোমরা তাই করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাদের দেখবেন। আমি জানি অনেকেই সীমা অতিক্রম করে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধাচরণ করছে। আমরা সেগুলোকে প্রফেশনালি ডিল করবো। তোমরা কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করবেনা, কাউকে মারধর করবেনা। আমি চাইনা আমার সেনাবাহিনীর কাউকে কেউ মন্দ বলুক। রাগকে নিয়ন্ত্রন করতে হবে। Be Professional, সবশেষে তোমাদের সবাইকে ও তোমাদের পরিবারের সবাইকে অগ্রিম ঈদের শুভেচ্ছা। আর মনে রাখবেঃ
Restrain.. "
আশাকরি সৃষ্টিকর্তা আমাদের সেনাবাহিনী কে দেশ রক্ষায় অনন্য ভূমিকা রাখার সুযোগ করে দিবেন। কারন দেশবাসীর অনেক গর্বের জায়গা আমাদের সেনাবাহিনী। সবাই দেশের জন্য যার যার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ করার চেষ্টা করি।