সীমান্তবর্তী সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা দিন দিন যেন পরিণত হচ্ছে ভুয়া ফেসবুক আইডি ও ভুয়া সাংবাদিকতার এক ভয়ংকর আখড়ায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে একটি শ্রেণি গোয়াইনঘাটের অনলাইন পরিসরকে করছে কলুষিত। বাড়ছে ব্যক্তি মানহানির ঘটনা, তৈরি হচ্ছে সামাজিক অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা।
সাম্প্রতিক সময়ে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ও ইউনিয়নে নজরে পড়ছে অদ্ভুত নাম ও ছবি ব্যবহার করে পরিচালিত শত শত ভুয়া ফেসবুক আইডি। এসব আইডির বেশিরভাগই স্থানীয় কোনো ঘটনা বা ব্যাক্তির ছবি/নাম জুড়ে দিয়ে অপপ্রচার চালাতে ব্যস্ত। কেউ কারো ব্যক্তিগত ছবি বিকৃত করে ছড়াচ্ছে, কেউ আবার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কুৎসিতভাবে উপস্থাপন করছে।
ভুয়া সাংবাদিকতার ভয়াল রূপে কাজ করছে।
এসব ভুয়া আইডির মালিকদের অনেকেই নিজেদের "সাংবাদিক", "অনলাইন রিপোর্টার", "ইনভেস্টিগেটিভ মিডিয়া এক্টিভিস্ট" পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। কাগজপত্র বা স্বীকৃত অনলাইন গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা না থাকলেও এরা নানা নামে পেইজ খুলে প্রচার করছে মিথ্যা খবর, গুজব ও বিভ্রান্তিকর তথ্য।
ভুয়া আইডির মাধ্যমে কাউকে ‘দুর্নীতিবাজ’ কিংবা ‘অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত’ আখ্যা দিয়ে দেওয়া হচ্ছে পোস্ট। এসব পোস্ট ভাইরাল হওয়ার পর মানুষজন যাচাই না করে বিশ্বাস করে বসছে, যা পারিবারিক, সামাজিক এমনকি রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের জন্ম দিচ্ছে। কখনো কখনো তা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে।
অপরিকল্পিত ডিজিটাল সিকিউরিটি ব্যবস্থা।
কম বয়সীদের প্রযুক্তির অপব্যবহার।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার ঘাটতি।
রাজনৈতিক প্রতিহিংসার হাতিয়ার হিসেবে ফেসবুক ব্যবহার।
ভুয়া পরিচয়ে চাঁদাবাজি ও প্রতারণা করার সুযোগ।
স্থানীয় সচেতন নাগরিক ও তরুণ সমাজ বলছে, “আমরা সত্যিকার সাংবাদিকতা চাই, গুজব-ভিত্তিক অপপ্রচার নয়। এই ভুয়া আইডিগুলো গোয়াইনঘাটের সামাজিক বন্ধনকে দুর্বল করে দিচ্ছে।”
বিশেষজ্ঞ, প্রশাসন ও সচেতন মহল নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছেন—
প্রতি ইউনিয়নে ভেরিফায়েড অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট তালিকা প্রণয়ন
ভুয়া সাংবাদিকদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা
সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলা
সাইবার অপরাধ দমন শাখার নিয়মিত মনিটরিং
 বিদ্যালয় পর্যায়ে responsible social media use বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া
গোয়াইনঘাট থানা ও উপজেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা  জানিয়েছে, ভুয়া আইডি বা ভুয়া সাংবাদিকতা সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে কয়েকটি তদন্তও শুরু হয়েছে বলে সূত্র জানায়।
গোয়াইনঘাটের অনলাইন পরিমণ্ডলকে নিরাপদ, দায়িত্বশীল ও সত্যনিষ্ঠ করতে হলে ভুয়া আইডি এবং ভুয়া সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে প্রশাসন ও জনসাধারণকে একযোগে কাজ করতে হবে। নাহলে এই সামাজিক ব্যাধি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।