অপরিকল্পিত পর্যটন ব্যবস্থাপনার কারণে কক্সবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে দেশী-বিদেশী পর্যটকরা তার মধ্যে বন্ধ হওয়ার পথে সী সেইফ লাইফ গার্ড প্রকল্প।
১১ বছরে ৭৯৫ জন ডুবে যাওয়া মানুষকে জীবিত উদ্ধার করেছে সী সেইফ লাইফ গার্ড কর্মীরা। কিন্তু অক্টোবর থেকে সমুদ্রপাড়ে আর দেখা মিলবে না লাইফ গার্ড কর্মীদের। সেপ্টেম্বর মাসেই শেষ হবে সী সেইফ লাইফ গার্ড প্রকল্পের কার্যক্রম। এমনটাই জানিয়েছেন সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশের সী সেইফ প্রজেক্টের ফিল্ড টীম ম্যানেজার ইমতিয়াজ আহমেদ। তিনি বলেন " ২০২৪ সালের ডিসেম্বরেই এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু কক্সবাজার জেলা প্রশাসক প্রকল্পটির দাতা সংস্থা রয়্যাল ন্যাশনাল লাইফ বোট ইনস্টিটিউট (আরএনএলআই) এর কাছে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য চিঠি লিখেছিলেন। তার ভিত্তিতে দাতা সংস্থাটি এ বছরে ৬ মাস পরবর্তীতে আরো ৩ মাস বৃদ্ধি করেছে। সে হিসেবে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্তই এ প্রকল্পের কাজ চলবে। প্রকল্পটি যেন চলমান থাকে তার জন্য জেলা প্রশাসক, বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি ও হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সাথে মিটিং এ বলা হয়েছিলো। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির সম্ভাবনার কথা শুনিনি। "
সংস্থাটি জানায় ২০১২ সাল থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে এবং ২০১৪ সাল থেকে পাইলট প্রজেক্টের মাধ্যমে কাজ শুরু করা হয়। ২৭ জন দক্ষ কর্মী বিভিন্ন শিফটে ভাগ হয়ে সাগরে ভেসে যাওয়া মানুষদের উদ্ধার অভিযানে কাজ করে যাচ্ছে।
সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশের সিনিয়র এডভাইজার ড. শাইকুল ইসলাম হেলাল বলেন " দাতা সংস্থা বলে দিয়েছে এ প্রকল্পটির মেয়াদ আর বাড়বেনা । ইতোমধ্যে আমরা মন্ত্রণালয় ও সচিবালয়ে কথা বলেছি। এখন পর্যন্ত কোন ধরনের আশা আমরা পাইনি। তবে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক এ বিষয়ে খুবই আন্তরিক। তিনিও এ প্রকল্পটিকে রাখার জন্য চেষ্টা করছেন"
এ বিষয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন বলেন " এ প্রকল্পটি ২০২৪ সালেই বন্ধ হয়ে যেত। আমরা দাতা সংস্থাকে চিঠি দিয়ে এ পর্যন্ত চালাচ্ছি। এ বিষয়ে মন্ত্রনালয়ে চিঠি দিয়েছি। এখন পর্যন্ত মন্ত্রণালয় থেকে কোন উত্তর আসেনি। হয়ত তারা আরো বড় পরিসরে চিন্তা করতে পারে।"
সাগরপাড়ে লাইফ গার্ডের উদ্ধার কার্যক্রম বন্ধ হলে মৃত্যু ঝুঁকিতে পরবে পর্যটকরা এমনটাই মনে করছে পর্যটক ও স্থানীয়রা। ঢাকা থেকে আগত পর্যটক আসিফুর রহমান বলেন " লাইফ গার্ডের কর্মীরা যেভাবে প্রতিনিয়ত আমাদের সতর্ক করছে উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য তৎপর রয়েছে তা সত্যিই প্রসংশার দাবী রাখে। তারা না থাকলে পর্যটকরা ঝুঁকিতে থাকবে।"
স্থানীয় সাংবাদিক দীপক শর্মা দীপু বলেন " প্রতি বছর লাইফ গার্ড কর্মীরা সাগরে ভেসে যাওয়া অনেক পর্যটককে উদ্ধারে সব সময় তৎপর থাকে। এবং সাগরে নামার জন্য সঠিক নির্দেশনা দিয়ে থাকে। তাদের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে ঝুঁকিতে থাকবে পর্যটকরা।"
লাইফ গার্ডের এ প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা শোনার পর থেকে চিন্তিত লাইফ গার্ড কর্মীরা।
সিসেফ লাইফ গার্ড টিম লিডার ওসমান গনি বলেন " আমরা দীর্ঘ দিন ধরে অল্প বেতনে সিসেফ লাইফ গার্ডের সাথে আন্তরিকতা ও ভালোবাসার সাথে কাজ করে আসছি। সমুদ্র ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা থেকেই আমরা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে চলি। আমাদের ২৭ জন কর্মী এখন নিজেদের জীবন জীবিকা নিয়ে যেমন চিন্তিত ঠিক তেমনি সাগরে গোসল করতে আসা পর্যটকদের জীবন নিয়ে শংকিত।"