গত ২৬ জুলাই কুমিল্লা নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে এই আঙুল প্রতিস্থাপন করা হয়। মো. কামরুল ইসলামের (মামুন) নেতৃত্বে তিনজন চিকিৎসক এই অস্ত্রোপচার করেন।
সহকারী অধ্যাপক মো. কামরুল ইসলাম কুমিল্লার বেসরকারি ময়নামতি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান। তিনি কুমিল্লা নগরের টমছমব্রিজ এলাকার পিপলস্ হসপিটালে রোগী দেখেন। ওই হাসপাতালেই আশরাফুলের অস্ত্রোপচার হয়েছে।
আজ শনিবার সন্ধ্যায় কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ওই প্রবাসীর অস্ত্রোপচার শতভাগ সফল হয়েছে।
চিকিৎসকেরা বলছেন, অঙ্গ প্রতিস্থাপন একটি ব্যয়বহুল চিকিৎসা। এটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় দেশে তেমন অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ঘটনা নেই। তবে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের উন্নত দেশে বাংলাদেশিরা এই অস্ত্রোপচার করে থাকেন।
বর্তমানে কুমিল্লার ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আশরাফুল আলম। তাঁর হাত ও পা ব্যান্ডেজে বাঁধা। শনিবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার একমাত্র উপার্জনের পথ ছিল গাড়ি চালানো। কিন্তু হাতের আঙুল না থাকায় আমি তা–ও করতে পারছিলাম না। শেষ পর্যন্ত গত বছর দেশেই চলে আসি। এরপর দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছি। শুধু দেশেই নয়, সৌদি আরবেও বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে দেখেছি, এই অপারেশনে প্রচুর টাকা লাগে। সম্প্রতি কয়েকটি মাধ্যমে জেনেছি ডা. মো. কামরুল ইসলাম একজনের কেটে যাওয়া হাত জোড়া লাগিয়েছেন। এরপর আমি কুমিল্লায় আসি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার পায়ের আঙুল হাতে এনে লাগাতে পারব স্বপ্নেও চিন্তা করিনি। অবশেষে অপারেশন সফল হয়েছে। মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাচ্ছি।’
আশরাফুল আলম আরও বলেন, ‘এখন নতুন করে অনুভব করতে পারছি আমার বৃদ্ধাঙ্গুল আছে। পায়ের একটি আঙুল না থাকলে চলা যায়, কিন্তু হাতের আঙুল না থাকলে কত যে সমস্যা, সেটি আমি টের পেয়েছি। ঝুঁকি আছে জেনেই আল্লাহর ওপর ভরসা করে অপারেশনের জন্য রাজি হয়েছিলাম। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, আরও কিছুদিন হাসপাতালে থাকতে হবে।’
এরই মধ্যে নার্ভগুলো সচল হয়েছে। আট দিন হয়েছে অস্ত্রোপচারের, এখন পর্যন্ত সবকিছু ইতিবাচক। যে কারণে বলা যাচ্ছে অস্ত্রোপচার সফল। ধীরে ধীরে প্রতিস্থাপন করা আঙুল তাঁর হাতের সঙ্গে ম্যাচ করে যাবে। -মো. কামরুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক, ময়নামতি মেডিকেল কলেজ
অস্ত্রোপচারের বিস্তারিত জানতে চাইলে কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ধরনের অস্ত্রোপচার অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। নিজেও চিন্তা করিনি কুমিল্লা জেলা শহরে এমন একটি ঘটনা আমার হাত ধরেই ঘটবে। কারণ, কুমিল্লাতে এমন ঘটনা এটাই প্রথম, আর ঢাকাতে এভাবে অঙ্গ প্রতিস্থাপন আছে কি না, আমার জানা নেই। আমি যতগুলো ঘটনা জানি, তার সবই হলো কেটে যাওয়া অঙ্গ জোড়া লাগানো হয়েছে। সম্প্রতি কুমিল্লায় কেটে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া হাত জোড়া লাগিয়ে সফল হওয়ার ঘটনা ঘটেছে আমার হাত ধরে। এবার আমরা সফলভাবে অঙ্গ প্রতিস্থাপন করতে পেরেছি। নিশ্চয়ই এটি স্বাস্থ্যসেবায় এক আশার আলো।’
পুরো অস্ত্রোপচারে প্রায় সাত ঘণ্টা সময় লেগেছে উল্লেখ করে এই চিকিৎসক বলেন, ‘রোগীকে বলা হয়েছিল, অস্ত্রোপচারে সফলতার নিশ্চয়তা ৫০ ভাগ। এতে তিনি রাজি হন এবং আমরাও অস্ত্রোপচার শুরু করি। তাঁর বাঁ পায়ের দ্বিতীয় আঙুল (বৃদ্ধাঙ্গুলের পাশের আঙুল) এনে হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলের স্থানে প্রতিস্থাপন করা হয়। এরই মধ্যে নার্ভগুলো সচল হয়েছে। আট দিন হয়েছে অস্ত্রোপচারের, এখন পর্যন্ত সবকিছু ইতিবাচক। যে কারণে বলা যাচ্ছে অস্ত্রোপচার সফল। ধীরে ধীরে প্রতিস্থাপন করা আঙুল তাঁর হাতের সঙ্গে ম্যাচ করে যাবে। তবে এর জন্য কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে। এরপর তিনি এই আঙুল দিয়ে স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারবেন বলে আশা করছি।’
এমন অস্ত্রোপচার দেশের চিকিৎসাবিজ্ঞানে নতুন মাইলফলক হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন আলী নুর মোহাম্মদ বশীর আহমেদ। শনিবার সন্ধ্যায় তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মনে করি, এটি যদি সফল হয়, তাহলে চিকিৎসাবিজ্ঞানের জন্য নতুন মাইলফলক। এতে দেশের সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে। বিদেশে গিয়ে কয়েক গুণ খরচ না করে দেশেই এমন জটিল অস্ত্রোপচার করা যাবে।’