কুড়িগ্রামে দুর্যোগ মোকাবেলায় লাইট হাউজের কার্যক্রমে সুফল পাচ্ছে দুর্যোগ প্রবণ এলাকার জনগোষ্ঠি। দুর্যোগ মোকাবেলায় লাইট হাউজ একটি স্বেচ্ছাসেবী ও উন্নয়নমূলক বেসরকারী সংস্থা ১৯৯২ সালে অনুমোদন পায়। এরপর লাইট হাউজ একটি স্বেচ্ছাসেবী ও উন্নয়নমূলক বেসরকারী সংস্থাটি দেশের গ্রামীণ-শহরে দরিদ্র,প্রান্তিক ও উচ্চ ঝুঁকির জনগোষ্ঠি, হিজড়া, আদিবাসী,কৃষক এবং অন্যান্য পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় স্বেচ্ছাসেবী ও উন্নয়নমূলক বেসরকারী সংস্থা লাইট হাউজ কুড়িগ্রামে পাঁচটি উপজেলার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এরমধ্যে কুড়িগ্রাম সদর, রাজারহাট, উলিপুর, চিলমারী এবং রাজিবপুর। এসব উপজেলার মধ্যে দুর্যোগ প্রবণ ৩৫টি ইউনিয়নে স্থানীয় পর্যায়ে ৭০জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ দেয়।
সরেজমিনে দেখাযায়,তিস্তা নদী ঘেঁষা রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের বীর তৈয়ব খাঁ গ্রামে পিছিয়ে পড়া দরিদ্র প্রায় ৩০জন কিশোরী-মহিলা কে নিয়ে আগাম দুর্যোগ পূর্বাভাস ও দূর্যোগকালীন স্বাস্থ্য ও সহিংসতা বিষয়ে একটি উঠা বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। লাইট হাউজের বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক প্রীতিলতা রায় উঠান বৈঠকটি পরিচালনা করছেন। একই উপজেলার নাজিমখান ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের বাছরা রায়পাড়া গ্রামেও পিছিয়ে পড়া ১৫ জন কিশোরীকে নিয়ে উঠান বৈঠক করছেন ওই ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক জিহাদ হাসান। একই চিত্র দেখাযায়, ধরলা নদী ঘেঁষা পাঁচগাছি ইউনিয়নেও।
স্বেচ্ছাসেবক কমলা খাতুন,প্রীতিলতা রায় জানান, লাইট হাউজ এর পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে প্রশিক্ষণ পেয়েছি আমরা। আমাদের কুড়িগ্রাম জেলা দুর্যোগ প্রবণ এলাকা হওয়ায় এখানে দারিদ্র মানুষের হারও বেশি। বন্যাসহ যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে এই জনপদের মানুষের তেমন কোন ধারণা নেই। বংশ পরামপরায় দুর্যোগ মোকাবেলা করে আসছে। নেই আগাম কোন প্রস্তুতি। বিশেষ করে নারী-কিশোরীদের স্বাস্থ্যগত দুর্ভোগ কমাতে আমার এলাকায় সচেনতা বৃদ্ধির জন্য স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করছি।
স্বেচ্ছাসেবক শাহিন আলম, জিহাদ হাসান জানান,অনেকের ধারণা আমাদের এসব উঠান বৈঠকের কারণে হয়তো কোন পারিশ্রমিক পেয়ে থাকি। কিন্তু এখানে কোন ধরনের পারিশ্রমিক পাই না আমরা স্বেচ্ছাসেবকরা। মানুষের জন্য কাজ করার অনেক প্লাটফরম থাকলেও লাইট হাউজের কার্যক্রমটি ব্যতিক্রম মনে হওয়ায় এখানে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছি। দুর্যোগ কালীন সময়ে মানসিক স্বাস্থ্য, দুর্যোগের প্রস্তুতি এবং সহিংসতা নিয়ে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে স্থানীয়দের সচেতনা তৈরিতে কাজ করছি আমরা স্বেচ্ছাসেবকরা।
কিশোরী বুলবুলি আকতার বলেন,স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে আমরা দুর্যোগকালীন সময়ে কি করণীয় তা আমরা জানতে পারছি। সাধারণ অনেক সংস্থাকে দেখেছি পরিবারের বড় সদস্যদের মুল্যায়ন করে থাকে। কিন্তু উঠান বৈঠকের মাধ্যমে পরিবারের বড়দের পাশাপাশি ছোটদেরও সচেতন ও করণীয় আছে তা আমরা শিখতে পারছি।
এরআগে দুর্যোগ মোকাবেলায় লাইট হাউজ স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ, ওয়ার্কসপ, সচেতনকরন সভা, দুর্যোগ প্রবন এলাকার দারিদ্রপীরিত এবং ঝুঁকি প্রবণ নারী, কিশোরী এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে দুর্যোগকালীন সময়ে জেন্ডার সহিংসতা হ্রাসে সচেতনতামূলক জ্ঞান প্রদান করেছে। জেলার দুর্যোগ প্রবণ ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরত নারী, কিশোরী এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিরাপত্তাহীনতা মোকাবেলা করার জন্য মোবাইল অ্যাপ, পোষ্টার, লিফলেট, ফ্লায়াস, অনলাইন প্লাটফর্মসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেয়।
এছাড়াও দূর্যোগ প্রবণ এলাকার দারিদ্রপীরিত এবং ঝুঁকিপ্রবণ এলাকায় নারী,কিশোরী এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে দূর্যোগকালীন সময়ে জেন্ডার সহিংসতা হ্রাসে সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান চালানোর জন্য ৯০জন স্থানীয় সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
প্রকল্পের সমন্বয়কারী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রকল্পের শুরু থেকেই স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে বিভিন্ন সচেতনতা মূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। কুড়িগ্রাম জেলার পাঁচটি উপজেলার ৩৫টি ইউনিয়নে প্রায় এক শতাধিকেরও বেশি উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রকল্প শেষ হলেও স্বেচ্ছাসেবকগণ তাদের সচেতনতামূলক উঠান বৈঠক চালিয়ে যাবেন। এভাবে করে প্রায় ২০ হাজারের ও বেশি দূর্যোগ প্রবণ এলাকার দারিদ্রপীরিত ও ঝুঁকিপ্রবণ এলাকায় নারী, কিশোরী এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সচেতন করে গড়ে তোলা সম্ভব।এর ফলে মানুষ বিভিন্ন দুর্যোগ থেকে নিজে এবং নিজেদের পরিবার সহ জানমাল এবং তাদের সম্পদ গুলোকে রক্ষা করতে পারবে।