সুস্থভাবে বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, এটি এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য পাঁচ বছরে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ কোটি গাছ লাগানো। সেই গাছ পরিবেশকে যেমন রক্ষা করবে, একইভাবে দেশকে বন্যা ও খরা থেকে রক্ষা করবে।

সোমবার (৪ আগস্ট) ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন ও আমার না বলা কথা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে এ সমাবেশের আয়োজন করে যুবদল। সমাবেশে গত ১৫ বছরে দলের শহীদ পরিবারগুলোকে সম্মাননা দেওয়া হয়।

তারেক রহমান বলেন, বিগত ১৭ বছর দেশের মানুষ তাদের রাজনৈতিক অধিকার, কথা বলার অধিকারের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। কত অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়েছে তা আজ এই সমাবেশের মঞ্চে শহীদ পরিবারের সদস্য যারা বসে আছেন তাদের দেখলে বোঝা যায়।

তিনি বলেন, শুধু জুলাই আগস্ট না, বিগত ১৫ বছর ধরে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী, রাজনৈতিক কর্মীর বাইরে সমাজের বিভিন্ন মানুষ, বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ নিজেদের অধিকারের কথা তুলে ধরতে গিয়ে, দাবি আদায়ের করতে গিয়ে বিভিন্নভাবে পলাতক স্বৈরাচারের অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এসব মানুষকে, এসব শহীদ এবং সব অত্যাচারিত মানুষ যারা বেঁচে আছেন প্রত্যেককে সত্যিকারভাবে সম্মানিত করতে চাই। তাদের ত্যাগের প্রতি যদি সম্মান জানাতে হয়, তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে সামনে এগোতে হবে। এই দেশকে সামনে নিয়ে যেতে হবে।

বিএনপির শীর্ষ এ নেতা বলেন, তাদেরকে শ্রদ্ধা করার একমাত্র উপায় হচ্ছে তারা যে প্রত্যাশা নিয়ে রাজপথে নেমে এসেছেন তা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা। সেই প্রত্যাশা বাস্তবায়নের মাধ্যমে তাদেরকে সম্মান জানানোর একমাত্র উপায়।

বাংলাদেশের জনগণ পরিবর্তন চায় বলে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, এখন আর স্বপ্ন কিংবা প্রতিশ্রুতি চায় না। জনগণ এবার প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন চায়। সেই আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে আগামী দিনের রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রণয়নের চেষ্টা করছি। আগামী দিনের নীতি জনগণের জীবন উন্নয়নের রাজনীতি, দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা– আমাদের রাজনীতির অন্যতম মূল লক্ষ্য।

তিনি আরও বলেন, কর্মসূচি বাস্তবায়নের প্ল্যান প্রোগ্রাম বা কর্মসূচি আমরা পর্যায়ক্রমে তৈরি করছি। হেলথ কেয়ার ওয়ার্কার নিয়োগের পরিকল্পনা করেছি। এই হেলথ কেয়ার নিয়োগের শতকরা ৮০ শতাংশ হবে যুবসমাজের মধ্য থেকে নারী সদস্য। এতে একদিকে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ঘটবে, অপরদিকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনগণের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় তারা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন।

শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বিখ্যাত ও অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি কর্মসূচি খাল খনন উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা-পরিচালনা করে দেখেছি, আগামী দিনে সরকার গঠন করতে সক্ষম হলে আমরা যেকোনো মূল্যে সমগ্র দেশে শহীদ জিয়ার খাল খনন কর্মসূচি আবার শুরু করব। মানুষকে রক্ষায় এই খাল খনন কর্মসূচি একটি এন্টিবায়োটিকের মতো কাজ করে।

জনগণের রায়ে বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে দ্রুততার সঙ্গে পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের কাজ শুরু করবেন বলে উল্লেখ করেন তারেক রহমান। নেতাকর্মীদের এ পরিকল্পনাগুলো দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরার আহ্বান জানান তিনি।

যুবদলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান রেখে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আপনারা জনগণের বিশ্বাস ধরে রাখুন। মনে রাখবেন, জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারলে আপনি নেতা। জনগণ প্রত্যাখ্যান করলে আপনি নেতা নন। প্রশাসনিক সহায়তায় নেতৃত্ব হয়ত প্রদর্শন করা যায় কিন্তু জনগণ সহায়তা করলে নেতৃত্ব দেওয়া যায়। আপনাদের প্রতি জনগণের সমর্থন থাকার কারণেই পলাতক স্বৈরাচারের প্রশাসন কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যুবদলের নেতাকর্মী-সমর্থকদের রাজপথ থেকে দূরে রাখতে পারেনি। সুতরাং আপনাদের প্রতি আমার আহ্বান জনগণের আস্থায় থাকুন।

জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি এম আবদুল মোনায়েম মুন্নার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়নের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মেহেদি আমিন, শহীদ মোসলেহ উদ্দিনের ছেলে আপন, ইয়াহিয়া আলীর মেয়ে তাইয়েবা খাতুন, হাফিজুর রহমান সুমনের স্ত্রী বিধী আখতার, নাদিম মিজানের স্ত্রী তাবাসসুম আখতার নেহা বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে যুবদলের সাবেক শীর্ষ নেতাদের মধ্যে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বরকত উল্লাহ বুলু, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাইফুল আলম নিরব ও সুলতান সালাউদ্দিন টুকু উপস্থিত ছিলেন।