প্রবাসে অবস্থানরত এক বাংলাদেশি যুবকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে ভিডিও কলে বিয়ে হওয়ার পর স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকাসহ প্রায় ১২-১৩ লক্ষ টাকার মালামাল নিয়ে পালিয়েছেন স্ত্রী রোকেয়া খাতুন (২২)। এই ঘটনায় পাবনার আটঘরিয়া উপজেলায় তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।


জানা গেছে, পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার চাঁদভা ইউনিয়নের ভরতপুর গ্রামের প্রবাসী শিহাব উদ্দিন রাঙা (৩৫) ও একই উপজেলার সঞ্জয়পুর গ্রামের রিপন মিয়ার মেয়ে রোকেয়া খাতুনের মধ্যে প্রায় দুই বছর আগে ভিডিও কলে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই রোকেয়া স্বামীর বাড়িতে না থেকে বাবার বাড়িতেই অবস্থান করতেন।

রাঙার পরিবার জানায়, বিয়ের পর থেকে রোকেয়ার ভরণপোষণ, বাবার জন্য রিকশা-ভ্যান কেনা, মাসিক হাতখরচ এবং গহনা উপহারসহ প্রায় ১২-১৩ লক্ষ টাকার ব্যয় বহন করেন রাঙা। আটঘরিয়া বাজারের নীলা জুয়েলার্সের মালিক নারায়ণ চন্দ্র কর্মকার জানান, রাঙার নির্দেশে রোকেয়ার জন্য সোনার চেইন, নাকফুল, রিং ও রুপার গহনা তৈরি করে দেওয়া হয়, যার মূল্য রাঙা বিদেশ থেকে পরিশোধ করেন।

পরিবারের দাবি অনুযায়ী, এর আগেও ২০২৪ সালের ১৩ নভেম্বর রোকেয়া একইভাবে পালিয়ে গিয়েছিলেন। তখন ১ লক্ষ টাকা খরচ করে তাকে ঢাকা থেকে উদ্ধার করে আনা হয়। বর্তমানে আবারও তিনি একইভাবে উধাও হয়েছেন। রোকেয়ার স্বামী রাঙা ও তার পরিবারের সদস্যরা ছেলের পরিবার থেকে দেওয়া গহনাদি ও অন্যান্য উপহার ফেরত চাইলে তারা বিরূপ আচরণ করে এবং গালিগালাজ করে বলে অভিযোগ রয়েছে।

রাঙার ভাই রবিউল ইসলাম জানান, “ভাই ফোন করে বললো, রোকেয়া ফোন ধরছে না। গিয়ে দেখি সে পালিয়েছে। প্রথমবার মামাতো ভাই জ্যাকি গিয়ে খুঁজে পায়। পুলিশ দিয়ে আনলেও ৫-৬ দিন পর আবার পালিয়ে যায়।”

রোকেয়ার স্বামীর বোন রেবেকা সুলতানা বলেন, “আমার ভাই আমাকে গহনা ফেরত আনতে পাঠায়। আমি গেলে তারা বলে, প্রমাণ আছে কি? আমরা বলি, সবকিছুর প্রমাণ আমাদের আছে। তবুও কিছু ফেরত দেয়নি।”

স্বামীর পরিবারের অভিযোগ, রোকেয়া এর আগে ফেসবুকে একটি বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন যেখানে তিনি লিখেন—“আমি প্রবাসী বাংলাদেশিকে বিয়ে করতে চাই, আগ্রহীরা ইনবক্সে যোগাযোগ করুন।” এই বিজ্ঞাপন থেকেই রাঙার সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং পরবর্তীতে ইমুতে প্রেম, তারপর ভিডিও কলে বিয়ে।

রোকেয়ার বাবা রিপন মিয়া বলেন, “রাঙা ভিডিও কলে আমার মেয়েকে বিয়ে করেছে। সে দেশে আসেনা। এখনআমার মেয়ের সাথে কোনো যোগাযোগ নাই। সে আমার জীবন থেকে মরে গেছে। সে কোথায় আছে জানি না। যেসব জিনিসপত্র পাঠিয়েছে, সেগুলো খরচ হয়ে গেছে, ফেরত দিতে পারবো না।”

তবে প্রথমবার পালিয়ে যাওয়ার সময় রিপন মিয়া নিজেই আটঘরিয়া থানায় অভিযোগ করেন—রোকেয়া ৩ লক্ষ টাকা নগদ ও দেড় লক্ষ টাকার স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পালিয়েছে।

রোকেয়ার দাদা আজিজুল হক বলেন, “বিয়ে দিয়েছে কিন্তু তিন বছরেও দেশে আসেনি। পাঁচবার পালানোর চেষ্টা করেছিল, আমি ঠেকাইছি। এবার আমি চাটমোহরের হাটে গিয়েছিলাম, এসে দেখি চলে গেছে।”

বর্তমানে ধারণা করা হচ্ছে, রোকেয়া আবারও সেই আগের প্রেমিকের সঙ্গেই পালিয়ে গিয়েছেন, যদিও তার নাম-ঠিকানা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

রোকেয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে এবারে থানায় কোনো অভিযোগ করা হয়েছে কি না, সে বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।