দেশের প্রধান রাজনৈতিক শক্তিগুলো ফ্যাসিবাদবিরোধী অবস্থানে অভিন্ন চিন্তায় দাঁড়িয়ে আছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। মঙ্গলবার রাতের শেষ প্রহরে যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবনে অনুষ্ঠিত গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের সামনে এই বার্তা তুলে ধরেন তিনি।
তিনি বলেন, “বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলনের নেতারা অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আলোচনায় অংশ নেন। বৈঠকে অংশ নেওয়া প্রতিটি দল ফ্যাসিবাদবিরোধী অবস্থানে নিজেদের সুস্পষ্ট ও ঐক্যবদ্ধ মনোভাব প্রকাশ করেছে। তাদের ভাষ্য ছিল পরিষ্কার—মতপার্থক্য থাকতে পারে, কিন্তু গণতন্ত্র রক্ষার সংগ্রামে তারা এক কাতারে।”
আলোচনার মূল সুর ছিল—রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা থাকলেও মৌলিক প্রশ্নে একতা অপরিহার্য। আসিফ নজরুল বলেন, “তাদের বক্তব্যে স্পষ্ট—রাজনৈতিক ভাষ্য বা মঞ্চে একে অপরের সমালোচনা থাকতেই পারে, কিন্তু তা ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের অন্তরায় নয়। বরং গণতান্ত্রিক চর্চার একটি বহিঃপ্রকাশ। এই পার্থক্য থেকেই বিভ্রান্তি তৈরি করা অনুচিত।”
বৈঠকে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং নির্বাচনী কাঠামো নিয়ে দলগুলোর উদ্বেগও সামনে আসে। আইন উপদেষ্টা জানান, “দলগুলো মনে করছে, কিছু এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ঘাটতি রয়েছে, যা মোকাবিলায় সরকারকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে তারা একটি স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বিষয়ে সরকারের সদিচ্ছা দেখতে চায়।”
প্রধান উপদেষ্টা দলগুলোর উদ্দেশ্যে বলেন, “জনগণ চাইছে আপনারা একসঙ্গে থাকুন। শুধু কৌশলগত নয়, দৃশ্যমান ঐক্যই এখন সবচেয়ে বড় বার্তা দিতে পারে—গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা রক্ষার লড়াইয়ে।”
আসিফ নজরুল আরও বলেন, “এই দলগুলো প্রমাণ করেছে যে, যখনই দেশের সংকটময় পরিস্থিতিতে জাতীয় নেতৃত্ব প্রয়োজন হয়, তারা এক ছাদের নিচে আসে। প্রধান উপদেষ্টার আহ্বানে সাড়া দেওয়া এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে সক্রিয় উপস্থিতি—এই দুইটি বিষয়ই ঐক্যের বাস্তব প্রমাণ।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, “নিষিদ্ধ ও চিহ্নিত চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলো কিছু এলাকায় নতুনভাবে মাথা তুলছে। দলগুলো এসব বিষয়ে প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা প্রত্যাশা করছে। ফ্যাসিবাদ ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ জরুরি।”
শেষ পর্যন্ত এই বৈঠক শুধু একটি আলোচনাই নয়, বরং একটি বার্তা—মতভেদ থাকতে পারে, কিন্তু গণতান্ত্রিক আদর্শে আপস নয়।