সারা দেশে বর্ষা মৌসুমের প্রভাব পড়েছে প্রকৃতি ও জনজীবনে। টানা বৃষ্টিতে অনেক জায়গায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। আর এই পানির কারণে সাপ তাদের আবাসস্থল ত্যাগ করে উঠে আসছে মানুষের ঘরবাড়ি ও উঁচু স্থানে। ফলে গ্রামীণ ও শহরতলির ডাঙ্গা এলাকা, রান্নাঘর, গুদামঘর, খামারবাড়ি কিংবা খড়ের গাদায় সাপের উপস্থিতি বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে।

সাম্প্রতিক চিত্র:
গত কয়েক সপ্তাহে বিভিন্ন জেলায় সাপে কাটা রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। বিশেষ করে বরিশাল, খুলনা, ময়মনসিংহ ও রাজশাহী অঞ্চলের গ্রামীণ এলাকায় এমন ঘটনা বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এসব অঞ্চলে সাপে কেটে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়েও চাপে পড়েছে স্থানীয় হাসপাতালগুলো।

সাপের উপদ্রবের কারণ:

টানা বৃষ্টি ও বন্যা পরিস্থিতিতে সাপের গর্ত পানিতে ভরে যাওয়ায় তারা ডাঙ্গায় উঠে আসে।

আশ্রয় নিতে গৃহস্থের বাড়ি, খড়ের গাদা, কাঠের স্তূপ কিংবা রান্নাঘর ব্যবহার করে।

মুরগির খামার, ধান/চাল রাখার ঘরে ইঁদুর থাকায় খাবারের খোঁজে সাপ আসে।

সচেতনতামূলক পরামর্শ:

 বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার রাখা: ঝোপঝাড়, কাঠের স্তূপ ও খড়ের গাদা সরিয়ে ফেলুন।
 রাতে হাঁটার সময় সতর্ক থাকা: টর্চ বা আলো ব্যবহার করুন। খালি পায়ে হাঁটবেন না।
 জুতা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করুন: বিশেষ করে ধানক্ষেত বা মাটির ঘরে কাজের সময়।
শোবার আগে খাট বা বিছানা ভালো করে দেখে নিন।
 ঘরের আশেপাশে সাপের গর্ত বা চলাচলের চিহ্ন দেখলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানান।
 ইঁদুর দমন করুন, কারণ ইঁদুরের পেছনে সাপ চলে আসে।

সাপে কাটলে করণীয়:
যা করা যাবে না:

সাপে কাটার স্থানে কেটে রক্ত বার করা যাবে না।

ঝাঁকানো, জড়ানো বা দড়ি দিয়ে শক্ত করে বাঁধা যাবে না।
ঘরোয়া টোটকা বা ওঝার ঝাড়ফুঁক নয়, সরাসরি হাসপাতালে যেতে হবে।


যা করা উচিত:
রোগীকে যতটা সম্ভব শান্ত রাখতে হবে।

দ্রুত হাসপাতালের দিকে রওনা দিন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা নিতে হবে।

যদি সম্ভব হয়, সাপটি চিনে রাখুন বা ছবি তুলুন— চিকিৎসায় সহায়তা করতে পারে।


সরকারি ও সামাজিক করণীয়:

উপজেলা বা ইউনিয়ন পর্যায়ে সচেতনতামূলক প্রচারণা জোরদার করা।

গ্রামে গ্রামে সাপে কাটা প্রতিরোধে মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ।

প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পর্যাপ্ত এন্টিভেনম সরবরাহ নিশ্চিত করা।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্বাস্থ্যকর্মীদের এই বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া।


বর্ষা বাংলাদেশের জন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর শস্যের বার্তা নিয়ে আসে। তবে এর সঙ্গে বাড়ে সাপের উপদ্রবও। তাই আমাদের সচেতনতা, প্রাথমিক চিকিৎসা জ্ঞান এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে সাপের কারণে অকাল প্রাণহানী রোধ করা সম্ভব।