টাঙ্গাইলে যৌথবাহিনীর অভিযানে টাঙ্গাইল সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতিসহ ৩৪ জুয়াড়িকে মাদক ও মাদকের উপকরণসহ আটক করা হয়। তবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শুধুমাত্র জুয়া আইনে মামলা করা হয়। মাদকের মামলা দেয়নি পুলিশ। ফলে মামলা হওয়ার মাত্র ৩ ঘন্টার মধ্যে জামিন নিয়ে বেরিয়ে এসেছেন সবাই।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ভিক্টোরিয়া রোডে অবস্থিত শতাব্দী ক্লাবে অভিযান চালিয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজগর আলীসহ ৩৪ জনকে আটক করেছে যৌথবাহিনীর সদস্যরা। মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) গভীর রাতে এ অভিযান পরিচালিত হয়।

অভিযানের সময় আটক ব্যক্তিদের কাছ থেকে নগদ এক লাখ ৪৯ হাজার ৪১০ টাকা, জুয়া খেলার সরঞ্জাম এবং দুটি খালি মদের বোতল জব্দ করা হয়। আটককৃতদের মধ্যে রয়েছেন—সাবেক জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক দেওয়ান শফিকুল ইসলাম, কালিবাড়ির রক্ষিত বিশ্বজিৎ, সবুর খান বীর বিক্রমের ছেলে মো. শাহ আলম খান মিঠু, দিঘুলিয়ার জসিম উদ্দিন, বাঘিলের গোলাম মাওলা, থানাপাড়ার শাহিন আহমেদ, আবু জাফর খান, বিশ্বাস বেতকার মো. আব্দুর

রশিদ, আকুর টাকুর পাড়ার মঈন খান, করটিয়ার মোস্তফা কামাল, সাবালিয়ার বিশ্বনাথ ঘোষ, একে এম মাসুদ, বেতকার শিপন, মহব্বত আলী, আশিকুর রহমান, রফিক, আখতারুজ্জামান, এস এম ফরিদ আমিন, কবির হোসেন, মোশারফ উদ্দিন, রফিকুল, হাসান আলী, হাবিল উদ্দিন, জাহিদ, প্রিন্স খান, সৈয়দ শামসুদ্দোহা, সাদেকুর, সেলিম, শাহ আলম, সিরাজুল, শফিক, আরমান ও শামসুল হক।

টাঙ্গাইল সদর থানার ওসি তানবীর আহমেদ বলেন, যৌথবাহিনী রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ক্লাবটিতে অভিযান চালায়। জুয়ার আসর থেকে উপজেলা বিএনপি নেতাসহ ৩৪ জনকে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। অতঃপর আসামীদের সঙ্গে প্রাপ্ত মাদক এবং জুয়ার সরঞ্জামের প্রসঙ্গ আসলে তিনি তা অস্বীকার করেন। এবং গণমাধ্যমকে জানান, যৌথ বাহিনীর সদস্যরা যেভাবে আসামীদের হস্তান্তর করেছেন, সেভাবেই তাদেরকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। এখানে মাদক বা জুয়ার কোন সরঞ্জাম তিনি পান নি, ফলে আদালতে এমন কোন নমুনা প্রেরণ করা যায় নি।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আজাদ বলেন- “মদের বোতল, গাঁজা কাটার যন্ত্র ও গাঁজা সহ নানাবিধ জিনিসপত্র অভিযান পরবর্তী ছবিতে দেখা গেলেও মামলার গুরুত্বপূর্ন আলামত হিসেবে এসবের কোন কিছুই আদালতে আলামত হিসেবে দেখানো হয়নি। এটি সম্পূর্নরূপে আইনের পরিপন্থি কাজ। এই শহরের এরকম আরও অনেক ক্লাব রয়েছে। যেখানে অভিযান চালানো জরুরি।”

টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আদিবুর রহমান বলেন, উদ্ধারকৃত বোতলে মাদক না থাকায় মামলা দেওয়া হয়নি। মাদক না পেলে কীভাবে মাদক মামলা হবে? অতঃপর জুয়ার সরঞ্জাম এবং গাঁজার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি বিষয়টি নিয়ে যতটুকু জানি ততটুকু আপনাকে জানানো হয়েছে। পরবর্তীতে কোন তথ্য পাওয়া গেলে আমি অবগত করবো।

পুলিশের হেফাজত থেকে কোর্টে চালান করার মাত্র ৩ ঘন্টার মাথায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বাদল কুমার চন্দের আদালত থেকে জামিন পান সদর উপজেলা বিএনপির এই সভাপতি। জামিনে বের হয়ে এসেই, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজগর আলী তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার দাবি করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) দুপুরে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠকালে তিনি জানান- বাংলাদেশ জাতীয় কাবাডি দলের সাবেক অধিনায়ক, আন্তর্জাতিক কাবাডি রেফারি, সৌখিন মৎস্য শিকারি সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং বিভিন্ন শিক্ষা ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল পদে দীর্ঘদিন ধরে সততা ও সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। তার সুনাম ক্ষুন্ন করা হচ্ছে।

এদিকে, জুয়া কাণ্ডের ঘটনায় দলীয় নীতি ও আদর্শ পরিপন্থী অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে টাঙ্গাইল সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতিসহ তিন নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। গত বুধবার (১৩ আগস্ট) কেন্দ্রীয় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী লিখিতভাবে তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন।

কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়া নেতারা হলেন- উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজগর আলী, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক দেওয়ান শফিকুল ইসলাম, মির্জাপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য হাসান উদ্দিন লিটন। চিঠিতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে জবাব দিতে বলা হয়েছে। কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়ার কথা নিশ্চিত করে টাঙ্গাইল সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজগর আলী বলেন, বৃহস্পতিবারের (১৪ আগস্ট) মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে লিখিত জবাব পৌছে দেওয়া হবে। তবে এখনো পর্যন্ত আসগর আলীর চিঠি এবং তার বিরুদ্ধে নেয়া সাংগঠনিক ব্যবস্থা সম্পর্কে অবগত হওয়া যায় নি।