প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম এলেই জেলেরা আশায় বুক বাঁধেন—জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ উঠবে। কিন্তু চলতি বছর শ্রাবণের শেষপ্রান্তে এসেও নদীতে ইলিশের দেখা মিলছে না। বরং নদীর আচরণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইলিশের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।
মেঘনার পাড়ের তুলাতলি, নাছির মাঝি, স্লুইসগেট, ধনিয়া ও আশপাশের অর্ধশতাধিক মাছঘাটে দেখা যাচ্ছে ইলিশহীন নীরবতা। কোথাও কোথাও সামান্য কয়েক ঝুড়ি মাছ উঠলেও নেই আগের মতো হাকডাক কিংবা হাঁকাহাঁকি।
স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী মো. মিলন মাঝি জানান, “বৈশাখ থেকে আশ্বিন পর্যন্তই ইলিশের মৌসুম। কিন্তু এবার চার মাস পেরিয়ে গেলেও নদীতে তেমন মাছ নেই। অধিকাংশ জেলে খালি হাতে ফিরছেন।”
২০ বছরের অভিজ্ঞ জেলে মো. শহিদুল মাঝি বলেন, “নদীতে একবার নামতে গড়ে পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়। গত রাতে তিনটি ইলিশ পেয়ে মাত্র ছয় হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। মাথাপিছু ভাগে এসেছে মাত্র ১০০ টাকা।”
মো. জুয়েল মাঝি জানান, “রোববার ট্রলারে ৪ হাজার টাকা খরচ করে গিয়ে একটি বড় ইলিশ ও এক হালি জাটকা পেয়েছি। বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৩০০ টাকায়। উল্টো ৭০০ টাকা লোকসান হয়েছে।”
লিটন মাঝি বলেন, “চেয়ারম্যান ঘাটে আগে শতাধিক ট্রলার থাকত। এখন অন্তত ৫০ জন জেলে এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। যারা রয়ে গেছেন, তারাও টিকে থাকার লড়াই করছেন।”
চলমান এই সংকট থেকে মুক্তির আশায় মেঘনার তীরে দোয়া-মোনাজাতের আয়োজন করেছেন জেলেরা। কিন্তু এখনও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ফল, ফলে হতাশায় দিন কাটছে তাদের।
এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইলিশের প্রজনন ও অভ্যাসে পরিবর্তন এসেছে। নদীতে ডুবোচরের কারণে পানির রং ঘোলাটে থাকায় ইলিশ নদীতে ঢুকছে না। তবে সামনের পূর্ণিমায় পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে পারে বলে আমরা আশা করছি।”