রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে চাঁদনী আক্তার ওরফে লিপি (৩১) নামে এক প্রবাসীর স্ত্রীর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তিনি আলোচিত একটি মানবপাচার মামলার ভুক্তভোগী ছিলেন। মামলার চার্জ গঠনের ধার্য্য তারিখের আগের রাতে মৃত্যু ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। এ মৃত্যু হত্যা না আত্নহত্যা তা নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।
জানা গেছে, ২০২৪ সালের ১৫ জানুয়ারি লিপির দ্বিতীয় স্বামী মোঃ নাসির শেখ (দক্ষিণ উজানচর, মৃত শুকুর আলীর ছেলে) মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২-এর বিভিন্ন ধারায় রাজবাড়ী আদালতে ৫ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। মামলার অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন আসামীরা তার স্ত্রীকে ভালো বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে বিদেশে (দুবাই) পাঠিয়ে যৌন নির্যাতন করে। পরে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য বিকাশের মাধ্যমে ৩ কিস্তিতে ৫০ হাজার টাকা নিলেও ফেরত দেয় না বরং হুমকি দেয় যে, তোর স্ত্রীকে পাচার করে দিয়েছি, পারলে যা খুশি কর।
প্রায় এক বছর পর লিপি ওরফে চাঁদনী দেশে ফিরে এসে আদালতে আসামীদের পক্ষে স্বাক্ষ্য দেন যে, তিনি পাচারের শিকার হননি। এরপর ২ মাস আগে আসামী গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়ন সামচু মাস্টারের পাড়ার মোতালেব মাঝির ছেলে মোঃ নাজমুল (৩০), মোতালেব মাঝির স্ত্রী মোছাঃ নাজমা বেগম (৪৮), মৃত মাদার মাঝির ছেলে মোতালেব মাঝি (৫০) জামিনে মুক্তি পান। তবে ওই মানবপাচার মামলার আসামী কুমিল্লার দাউদকান্দির ছালমাদ মোল্লার ছেলে মোঃ হালিম মোল্লা (৩২) ও ছামাদ মোল্লা (৪৮) আদালতে কোন দিন হাজির হননি। লিপি ওরফে চাঁদনীর মৃত্যুর দিন (১০ আগস্ট) ওই মামলার চার্জ গঠনের তারিখ ছিল।
লিপি ওরফে চাঁদনীর প্রথম বিয়ে হয়েছিল কুমিল্লার দাউদকান্দিতে। পরবর্তীতে উজানচরের নাসির শেখকে বিয়ে করেন। সেখানেই তার একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। লিপি বিদেশে থাকা অবস্থায় নাসিরও বিদেশে (সৌদি আরব) চলে যায়। পরে লিপি দেশে ফিরে দৌলতদিয়া এলাকার ইরাক প্রবাসী মোঃ সবুজ সরদারের সঙ্গে মোবাইলে পরিচয় ও মোবাইলের মাধ্যমে বিয়ে করে এবং দেশে ফেরার পর স্থানীয় মৌলভীর মাধ্যমে আবারও বিয়ে হয়। সবুজের প্রথম স্ত্রী তার দৌলতদিয়া পৈত্রিক বাড়িতে তার পরিবারের সাথে বসবাস করেন। দ্বিতীয় স্ত্রী লিপি ওরফে চাঁদনীকে ছোটভাকলা ইউনিয়নের চর বালিয়াকান্দি গ্রামে নতুন বাড়ি করে দেন। বর্তমানে সবুজ ইরাকে কর্মরত।
গত রবিবার (১০ আগস্ট) সকালে চর বালিয়াকান্দি গ্রামের নিজ শয়নকক্ষ থেকে লিপির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরিবারের দাবি, মৃত্যুর আগের দিন তিনি ব্যাংক থেকে এক লাখ টাকা তুলেছিলেন এবং তার ঘর থেকে তিনটি দামি মোবাইল ফোন ও স্বর্ণালংকার খোয়া গেছে।
মামলার আইনজীবী রাজবাড়ী বারের অ্যাড. গোলাম মোস্তফা বলেন, নাসির শেখ ৬ মাস আগে সৌদি আরব চলে যান। তার এক মাস পর লিপি ওরফে চাঁদনী দেশে এসে আসামীদের পক্ষে আদালতে সাক্ষ্য দেন। গত ১০ আগস্ট মামলার চার্জ গঠনের দিন ধার্য ছিল। ওইদিনই জানতে পারি, লিপির মরদেহ তার শয়নকক্ষ থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম বলেন, নিহত লিপির শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। কক্ষে দুটি চায়ের কাপ ছিল একটি ব্যবহৃত, অন্যটি অক্ষত। ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। আগের মামলার বিষয়ে এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে দ্রুত রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চলছে।