সাতক্ষীরার সাবেক পুলিশ সুপার এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক উপ-কমিশনার কাজী মনিরুজ্জামানকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে সরকার। কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগে এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
রবিবার (১০ জুলাই ২০২৫) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-১ শাখা থেকে এই বরখাস্তের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনির স্বাক্ষর রয়েছে। প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, রংপুর রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে সংযুক্ত ডিএমপির সাবেক উপ-কমিশনার কাজী মনিরুজ্জামান কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই গত বছরের ২৫ নভেম্বর থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। এটি সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর ৩(খ) ও ৩(গ) ধারা অনুযায়ী ‘অসদাচরণ ও পলায়নে’র শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এর আগে চট্টগ্রামের সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজিসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তাকেও একই বিধিমালার আওতায় সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। প্রজ্ঞাপনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, বরখাস্তকালীন সময়ে তিনি খোরপোশ ভাতা পাবেন।
কাজী মনিরুজ্জামানকে ২০২২ সালের ৩ আগস্ট সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তার দায়িত্ব পালনের সময় বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে, যার মধ্যে রয়েছে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়, সোনা লুট এবং ভিন্নমত দমন। দেবহাটার একটি মহলের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে খলিষাখালিতে বসবাসরত ৭৮৫টি ভূমিহীন পরিবারকে পুলিশের সহায়তায় উচ্ছেদ করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
২০২২ সালের ২২ নভেম্বর, সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার থাকা অবস্থায় কাজী মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে ২০টি সোনার বার লুটের লিখিত অভিযোগ জানানো হয় পুলিশ সদর দপ্তরে। কিন্তু কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি এবং তার পদোন্নতি হয়।
২০২৩ সালের ১১ ডিসেম্বর তাকে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার পদ থেকে ডিএমপির উপ-কমিশনার হিসেবে বদলি করা হয়। তবে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে তাকে রংপুর রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়।
সাতক্ষীরায় কাজী মনিরুজ্জামানের সময়কালে সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁকে অপহরণ এবং নির্যাতনের অভিযোগও উঠেছে। সাংবাদিকের অভিযোগ অনুযায়ী, তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার দেখিয়ে নির্যাতন করা হয়।
এই বরখাস্তের ঘটনাটি বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীর অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও অনিয়মের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের প্রমাণ। কাজী মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ধরনের বরখাস্তের ঘটনা প্রশাসনিক দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে সরকারি উদ্যোগের অংশ। এটি দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।