এই মানবেতর জীবনযাপনে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম।
গত ১৭ আগস্ট রাতে খাদ্য সংকটে থাকা আফিয়া বেগমের পরিবারের খবর পেয়ে তিনি নিজেই ওই গ্রামে ছুটে যান। সেখানে উপস্থিত হয়ে তিনি অসহায় পরিবারের হাতে পাঁচ বস্তা খাদ্য সামগ্রী, দুই বান টিন ও নগদ অর্থ সহায়তা তুলে দেন। এ সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গ্রাম পুলিশবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয়রা জানান, আফিয়া বেগমের স্বামী দিনমজুর লোকমান আলী সংসারের উন্নতির আশায় মালয়েশিয়া যান। কিন্তু দীর্ঘ অসুস্থতার পর ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন এবং ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেন। স্বামীর চিকিৎসার জন্য প্রায় এক লাখ বিশ হাজার টাকা ঋণগ্রস্ত হন আফিয়া। এরপর থেকে সন্তানদের লালন-পালন ও অসুস্থ শাশুড়ির দেখাশোনা করতে গিয়ে তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েন।
অভাবের তাড়নায় দুই মেয়েকে গৃহকর্মী হিসেবে ঢাকায় পাঠাতে বাধ্য হয়েছেন আফিয়া বেগম। পরিবারের বাকিদের খাবারের যোগান দিতে না পেরে অনেক দিনই আধপেটে বা না খেয়েই দিন কাটে তাদের। জরাজীর্ণ ঘরে বৃষ্টির সময় পানি চুঁইয়ে পড়ে, কাপড়-চোপড় ভিজে যায়। দরজার স্থলে ঝোলানো কাপড় দিয়ে কোনো রকমে রাত কাটান তারা।
সহায়তা পাওয়ার পর কান্নাজড়িত কণ্ঠে আফিয়া বেগম বলেন,
“আমরা একবেলা খাই, তিনবেলা খেতে পারি না। বাচ্চারা ক্ষুধায় কান্না করলে কিছুই করার থাকে না। মাথা ঘোরে, কখন পড়ে যাই বুঝতেও পারি না। ঘরে দরজা নেই, কাপড় বেঁধে রাখি। আজ ইউএনও স্যার সাহায্য করেছেন, মনে হচ্ছে আবার বেঁচে উঠলাম।”
স্থানীয় চেয়ারম্যান আব্দুল হক ইউএনওর উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন,
“তিনি শুধু প্রশাসক নন, আমাদের সমাজে মানবিকতার প্রতীক। তাঁর এই কার্যক্রম আমাদের সবার জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক।”
এ বিষয়ে ইউএনও মো. তরিকুল ইসলাম জানান,
“এটা শুধু প্রশাসনিক দায়িত্ব নয়, একজন মানুষের প্রতি মানবিক কর্তব্যও। একজনের কষ্টে পাশে দাঁড়ানোই একজন প্রশাসকের প্রকৃত দায়িত্ব। সমাজের প্রত্যেককেই এভাবে একে অপরের পাশে দাঁড়াতে হবে।”
স্থানীয়রা আশা করছেন, সরকারি সহায়তার পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানরাও যদি এমন অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ান, তবে তাদের জীবন থেকে কিছুটা হলেও দুর্দশা কমে আসবে।