গাজা উপত্যকায় দীর্ঘদিনের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের মাঝে কিছুটা আশার আলো দেখা দিয়েছে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস ঘোষণা দিয়েছে, তারা ১০ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিতে প্রস্তুত।

যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় চলমান আলোচনায় অংশ নিয়েই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। তবে, হামাস একই সঙ্গে সতর্ক করেছে যে, ইসরায়েলের ‘অনমনীয় ও একগুঁয়ে মনোভাব’ আলোচনাকে জটিল করে তুলছে।

হামাসের শীর্ষ নেতা তাহের আল-নুনু এক বিবৃতিতে বলেন, "আমরা একটি সম্মানজনক যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে সর্বশেষ প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছি। আমাদের জনগণকে রক্ষা, গণহত্যা বন্ধ করা এবং মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা প্রয়োজনীয় নমনীয়তা দেখিয়েছি।"

তিনি আরও বলেন, যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে ইসরায়েলি বাহিনীর যেসব এলাকা থেকে সরে যাওয়া হবে, তা এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে যাতে ফিলিস্তিনিদের জীবনযাত্রা বিঘ্নিত না হয় এবং পরবর্তী ধাপের আলোচনার পথ সুগম হয়।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রধান ইয়াল জামির জানিয়েছেন, "বর্তমান পরিস্থিতিতে এমন একটি সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যার মাধ্যমে ১০ জন জীবিত জিম্মি এবং ৯ জনের মরদেহ ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।"

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও গাজা ইস্যুতে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। যদিও আগে যেমন দৃঢ়ভাবে তিনি যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদী ছিলেন, এবার কিছুটা সংযত মন্তব্য করেছেন। হোয়াইট হাউসে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, "গাজা নিয়ে একটি চুক্তি হওয়ার ভালো সম্ভাবনা রয়েছে।" সূত্র জানায়, আলোচনায় এখনো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতানৈক্য রয়ে গেছে।

ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর মধ্যে দুই দফা বৈঠক হয়েছে, যেখানে গাজায় যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা বাড়লেও গাজায় সংঘাত এখনো অব্যাহত রয়েছে। গত বুধবার ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত ৭৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন। এদের মধ্যে ৮ জন প্রাণ হারান একটি খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে, যেখানে তাঁরা ত্রাণ সংগ্রহে অপেক্ষমাণ ছিলেন। কেন্দ্রটি পরিচালনা করছিল গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন, যা ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় পরিচালিত।

হামাস বলছে, যুদ্ধবিরতির বাস্তবায়নের পথ সহজ নয়। এখনো আলোচনার টেবিলে রয়েছে জরুরি ত্রাণ প্রবাহ নিশ্চিতকরণ, ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতির নির্ভরযোগ্য নিশ্চয়তা অর্জনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।

সব মিলিয়ে বলা যায়, যুদ্ধবিরতির পথে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে ঠিকই, তবে চূড়ান্ত সমাধানে পৌঁছাতে হলে উভয় পক্ষকে আরও অনেক দূর এগোতে হবে এবং দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব নিরসনে দৃঢ় রাজনৈতিক সদিচ্ছা দেখাতে হবে।