দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, নীতি-আদর্শ পরিপন্থি কর্মকাণ্ড এবং একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে সাভারের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মোশারফ হোসেন মুশাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, নীতি-আদর্শ পরিপন্থি কর্মকাণ্ড এবং একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে সাভারের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মোশারফ হোসেন মুশাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে বিএনপির মিডিয়া সেলে প্রকাশিত এক সংশোধিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোঃ তাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, 'দলের গঠনতন্ত্র ও শৃঙ্খলা পরিপন্থি এবং দলের আদর্শ বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় মোশারফ হোসেন মুশাকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হলো।
দলীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, বহিষ্কৃত মোশারফ হোসেন মুশার বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় একাধিক চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও সহিংসতার অভিযোগ রয়েছে। চাঁদা না দেয়ায় এক ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে গিয়ে গুলি করায় তাকে গ্রেপ্তারও করেছিলো গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এছাড়া গত ৫ আগস্টের পর থেকে বিএনপির ব্যানার ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন বিতর্কিত নেতাকর্মীদের পৃষ্ঠপোষকতা করারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে দলের অভ্যন্তরীণ তদন্ত শেষে মোশারফ হোসেন মুশার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি হাইকমান্ড।
এদিকে একাধিক মামলার আসামী শীর্ষ সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ মোশারফ হোসেন মুশাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করায় স্বস্তি প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা। সাধারন মানুষের উপর জুলুমকারী মুসা ও তার ভাইদেরকে আইনের আওতায় এনে শাস্তিরও দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। 
সাভারের হেমায়েতপুর, জয়ানাবাড়ি, তেঁতুলঝোড়া, যাদুরচর, হরিণধরাসহ বিভিন্ন মহল্লার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সমর্থিত আন্তঃজেলা ট্রাকচালক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন গত ১০ বছর আওয়ামী লীগের তকমা লাগিয়ে চাঁদাবাজিতে লিপ্ত ছিলেন। সরকার পতনের পর এই মোশারফ ও তার ভাইয়েরা ভোল পালটে বিএনপির পদ নিয়ে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছে। চাঁদা দিতে না চাওয়ায় ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে গুরুতর আহত করে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে নিজেকে ‘ডন’ ভাবতে শুরু করেছেন তিনি। পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডিশ ব্যবসায়ী বলেন, মোশারফ আমার কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা নিয়েছে এবং আমার ডিশ ব্যবসা দখলে নেওয়ার তৎপরতাও চালাচ্ছে। আরেক ব্যবসায়ী বলেন, প্রতিদিন ফুটপাত থেকে তার বাহিনী চাঁদা তুলছে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। 
ভুক্তভোগীরা জানান, মোশারফ ও মেহেদীর লোকজনের চাঁদাবাজিতে বাধা দেওয়ায় বেধড়ক মারধরের শিকার হয়েছেন আরিফ, মেহেদী, আশরাফুল ইসলামসহ আরও কয়েকজন। 
মোশারফ বাহিনীর মারধরের শিকার সেন্টমার্টিন পরিবহণের কাউন্টার মাস্টার আরিফ বলেন, ৫ তারিখ দুপুরে আওয়ামী লীগের পতনের পর থেকেই রাতারাতি বেপরোয়া হয়ে উঠে মোশারফ বাহিনী। তিনি বলেন, মোশারফ বাহিনীর লোকজন এক অসহায় পরিবারের মালপত্র লুট করার সময় আমি বাধা দিলে হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে আমার বাঁ-হাতের তিন জায়গায় ভেঙে দিয়েছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মামলত হোসেন বলেন, প্রতিদিন ৩শ টাকা করে চাঁদা তোলা হচ্ছে কাঁচাবাজার থেকে। এলাকার ব্যবসায়ী তমিজ উদ্দিন বলেন, ভাবছিলাম সাধারণ মানুষ ভালো থাকবে। কিন্তু সেটা আর হলো না। বিএনপি এখনো ক্ষমতায় আসেনি, কিন্তু তাদের দলের লোকজন এরই মধ্যে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কার্যক্রম শুরু করেছে। বিএনপি যদি তাদের বিরুদ্ধে এখনই কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে বিএনপিরও আওয়ামী লীগের মতো একই দশা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিল্পঅধ্যুষিত সাভারের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের হেমায়েতপুর বাসষ্ট্যান্ডের ফুটপাত, পরিবহন, লেগুনা ও সিএনজি স্টেশন, কাঁচাবাজার থেকে প্রতিদিন কয়েক লক্ষ টাকা চাঁদা আদায় করেন মোশারফ, তার ভাই তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের বিএনপির সহসভাপতি মেহেদী হাসান, শরীফুল ইসলাম, রাকিব ও রাসেলসহ লোকজন। 
কোথাও নিজেরা সশরীরে, কোথাও সন্ত্রাসী বাহিনী পাঠিয়ে চালানো হচ্ছে এসব কর্মকাণ্ড। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি ও লুটতরাজে বাধা দেওয়ায় গত এক মাসে বেশ কয়েকজনকে গুরুতর আহত করা হয়েছে। এসব চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণে আছে তাদের নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী। গার্মেন্টসের ঝুট ব্যবসা দখল, ডিশলাইন-ইন্টারনেট ব্যবসা দখল, ফুটপাতে চাঁদাবাজি, স্কুল, মার্কেটের দখল নেওয়া থেকে শুরু করে তাদের হাত থেকে বাদ যায়নি বাসাবাড়ির ময়লা ফেলার নিয়ন্ত্রণও।
হেমায়েতপুর বাসস্ট্যান্ডের উত্তর পাশে জয়নাবাড়ি সড়কে ও হেমায়েতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের জমিতে নির্মিত মার্কেটে শতাধিক দোকান রয়েছে। এসব দোকান থেকে শরিফের নেতৃত্বে প্রতিদিন ২শ থেকে ১ হাজার টাকা তোলা হয়। টাকা না দেয়ায় কয়েকজনকে এরই মধ্যে দোকান ছাড়া করা হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয় সব স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণার পর নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে হেমায়েতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠন করে সভাপতি বনে গেছেন মোশারফের ভাই শরিফুফ ইসলাম। 
দল থেকে বহিস্কার এবং অভিযোগের বিষয়ে জানত মোশারফ হোসেনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবু বকর সরকার বলেন, নতুন পরিপত্র অনুযায়ী পদাধিকার বলে ইউএনও পরিচালনা কমিটির সভাপতি। কোনো রাজনৈতিক পরিচয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি হওয়ার সুযোগ নেই।