সংবাদ সম্মেলনে মোসা. ফুলেরা বলেন, আমি একজন পিতাহারা সন্তানের মা। আমার ছেলে মো. সোহেল রানা একজন সাহসী, মানবিক ও সমাজ সচেতন তরুণ। সে জুলাই আন্দোলনের একজন সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ও জুলাইযোদ্ধা। জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার জন্য আমার ছেলেকে তৎকালীন সময়ে মিথ্যা মামলায় কারাগারে থাকতে হয়েছিল। আজ আমার ছেলে আবারও মিথ্যা মামলায় কারাগারে আছে।
ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের স্বরুপ নগর এলাকায় একটি বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে গিয়ে তার ছেলে হয়রানি ও হামালার শিকার হন। ঘটনার সূত্রপাত ঘটে যখন সোহেল রানা একজন ঘটক মাধ্যমে জানতে পারে স্বরুপ নগর এলাকায় একটি বাল্যবিবাহ সংঘটিত হচ্ছে। এই সময় বিয়ের খবর পেয়ে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করে পুলিশকে অবহিত করে সোহেল রানা । এরপর ৩ থেকে ৪ জন বন্ধু মিলে ঘটনাস্থলে গিয়ে বাল্যবিবাহটি বন্ধ করার উদ্যোগ নেয় সোহেল রানা ও তার বন্ধুরা।
তবে কনের বাবা অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা লিয়াকত আলী এবং তার আত্মীয়-স্বজন সোহেল রানা ও তার বন্ধুদের ওপর হামলা চালান। এ সময় তার বন্ধুরা পালিয়ে গেলে সোহেল রানাকে আটকে রাখা হয়। পরবর্তীতে লিয়াকত আলী ও তার হবু জামাই একজন এসআই তাদের প্রভাব খাটিয়ে সোহেলের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে মামলা করেন।
৯৯৯-এ কল করেও সহযোগিতা পায়নি আমার ছেলে বরং এসআই আব্দুল হাই নামে একজন কর্মকর্তা ঘুষের বিনিময়ে আমার ছেলের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা রুজু করেন বলেও অভিযোগ করেন ফুলেরা।
এছাড়া সদর মডেল থানার সেকেন্ড অফিসার রাজু আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) রাতে থানার সেকেন্ড অফিসার রাজু আহমেদ দাবি করেছেন যে সোহেল রানা গত বছর থানায় হামলা চালিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো সে সময় (৬ আগস্ট পর্যন্ত) সোহেল কারাগারে ছিল।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা ও প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানিয়ে সোহেল রানার মা আরও বলেন, আইনের ঊর্ধ্বে কি অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা? ৯৯৯-এ কল দিয়েও যদি নিরাপত্তা না মেলে, তবে সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়? আমার ছেলে অপরাধ করতে যায়নি, বরং একটি বাল্যবিবাহ ঠেকাতে গিয়েছিল। সে যেন এমন শিক্ষা না পায় যে ভালো কাজ করলেই জেল হাজতে যেতে হবে। একজন মা হিসেবে আমি ন্যায়বিচার চাই। তাই ঘটনাটির নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হোক এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা হোক।
এছাড়া এই বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক আহ্বায়ক আব্দুর রহিম বলেন, আমরা ঘটনাটির প্রকৃত বিষয় জানতে চাই। তাই তদন্তের মাধ্যমে ঘটনাটির প্রকৃত রুপ উম্মোচিত করা হোক।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার সেকেন্ড অফিসার রাজু আহমেদ জানান, সবগুলো অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) এ.এন.এম. ওয়াসিম ফিরোজ বলেন, তাদের অভিযোগগুলোর বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে কেউ যদি লিখিত অভিযোগ দেয় তাহলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) একটি বাড়িতে গিয়ে চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ সোহেল রানাকে আটক করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশ। এ ঘটনায় সোহেল রানা বর্তমানে কারাগারে আছেন। এছাড়াও জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের সময় পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের মিথ্যা মামলায় আটক হয় এবং সে সময় কারাগারেও গিয়েছিলেন সোহেল রানা।