দলবল নিয়ে স্থানীয় একটি গরুর খামারের মালিকের কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিলেন বীরগঞ্জ উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাসেল ইসলাম। চাঁদা দিতে না চাইলে খামার মালিককে নানা হুমকি-ধমকিও দেন রাসেল। এমনটাই অভিযোগ ফার্ম মালিক হাফিজা খাতুনের। একপর্যায়ে ৬০ হাজার টাকা নিয়ে বাকি টাকা পরে নেবেন বলে সেই খামার মালিকের বাড়ি থেকে দলবল নিয়ে চলে যান। তবে চাঁদার বাকি টাকা আর নেওয়া হয়নি এই যুদবল নেতার। এর আগেই ভুক্তভোগীর করা মামলায় এখন কারাগারে রাসেল।তবে তার বাকি অনুসারীরা এখন পলাতক।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার এ ঘটনার পরদিন বুধবার বীরগঞ্জ থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী খামার মালিক হাফিজা খাতুন (৩৬)। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার বীরগঞ্জ বাজার এলাকা থেকে রাসেলকে গ্রেপ্তার করে দিনাজপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। বীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল গফুর গতকাল শুক্রবার বলেন, 'রাসেলকে গ্রেপ্তার করে আদালতে তোলা হয়। সেখান থেকে তাকে আদালত কারাগারে পাঠিয়েছেন। মামলায় আরও যারা এজাহার নামীয় আসামি আছে তাদের ধরতে আমাদের পুলিশ সদস্যরা অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন।
ঘটনার সময়কার দুটি সিসিটিভি ফুটেজ।ওই ফুটেজ দুটিতে দেখা গেছে, ভুক্তভোগীর বাড়ির প্রধান দরজা দিয়ে রাসেল তার দলবল নিয়ে ঢুকছেন। এরপর রাসেলের কয়েকজন অনুসারী বাড়ির আংগিনায় অপেক্ষায় থাকে এবং রাসেল আরও কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে ভুক্তভোগীর বাড়ির ভেতর ঢুকে যান। সেখান থেকে কয়েক মিনিট পরে আবার বেরিয়ে আসেন। এ সময় রাসেলকে বেশ উত্তেজিত দেখা যায়। উত্তেজিত অবস্থায় আরও কয়েকবার রাসেল আঙিনা থেকে বাড়ির ভেতরে ঢুকে আবার বেরিয়ে আসেন। একপর্যায়ে রাসেল আঙিনার এক কোনায় গিয়ে দাঁড়ান। সেখানে কিছু একটা লেনদেনের মতো চিত্র দেখা যায়। ক্যামেরার দুটি আলাদা কোণ থেকে দেখা ফুটেজ দুটিতে শুরুর সময় ছিল বিকেল ৫টা ৩২ মিনিট এবং শেষ সময় ছিল ৫টা ৪৯ মিনিট। ঘটনার সময়কার বর্ণনা দিয়ে ভুক্তভোগী হাফিজা খাতুন বলেন, 'ওরা বাইকে করে দলবল নিয়ে আমার বাসায় আসে। এসেই নানা ধরনের হুমকি-ধমকি দিতে থাকে। ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। আমরা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানাই। তখন নানাভাবে আমাকে ভয় দেখাতে থাকে। আমরা অল্প কিছু টাকা দিতে রাজি হই। এজন্য আমাদের বাড়ির উঠানের এক কোনায় গিয়ে একটি কালো ব্যাগে রাখা টাকা থেকে তাকে ও হাজার টাকা দিতে চাই। তখন তারা পুরো ব্যাগটাই থাবা দিয়ে নিয়ে যায়। সব মিলিয়ে ৬০ হাজার টাকা নিয়ে তারা চলে যায়। যাওয়ার সময় বাকি টাকা দু-এক দিনের মধ্যে না দিনে আরও কামেনা করার দুমকি দেয়।'
সিসি টিভির ভিডিও ফুটেজ দেখে চাঁদা নেওয়ার এই ঘটনায় সম্পৃক্ত আরও ছয়জনকে শনাক্ত করেছে বলে জানান বীরগঞ্জ থানার পুলিশ। সেদিন ওই বাড়িতে আরও গিয়েছিলেন বীরগঞ্জ উপজেনা পৌর যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক সাব্বির হোসেন ও মো. আলী, বীরগঞ্জ উপজেলা যুবদলেদর আহবায়ক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক মো. শরিফুল ইসলাম শিপলু এবং মো. শাকিল সরকার। বাকি দুজন রুবেল ও মাহবুব যবলদের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তাদের মধ্যে শুধু রাসেল গ্রেপ্তার হলেও বাকিরা পলাতক।
নেওয়া হয়নি কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে বীরগঞ্জ উপজেলা যুবদলের আহবায়ক মো. আসাদুল ইসলাম দুলালের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। তবে বীরগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব মো. তানভীর চৌধুরী বলেন, 'অভিযুক্তদের ব্যাপারে প্রতিবেদন তৈরি করে আমি কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। কেন্দ্র যেই নির্দেশনা দেবে ও ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, সেটা আমরা মেনে নেব। তাদের বহিষ্কার করা বা কোনো শান্তি দেওয়া আসলে আমার এখতিয়ারে পড়ে না।'
স্থানীয় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয় নেতাকর্মীদের অনেকেই অভিযোগ করছেন, উপজেলা বিএনপির সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জুর অনুসারী এই রাসেল ও তার সহযোগীরা।
মনজুরুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি জানান,আমি ঢাকায় আছি ঘটনার বিষয়ে কিছু জানিনা।