তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন শুরু হয়েছে, যা উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রবিবার বেলা সাড়ে ১১টায় আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়া এ সম্মেলন চলবে আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। দেশের প্রশাসনিক কাঠামোকে আরও কার্যকর, জনবান্ধব ও সেবাধর্মী করার লক্ষ্যে এই আয়োজন।
উদ্বোধনী ভাষণে টিমওয়ার্কের গুরুত্ব: সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশে বলেন, "সরকারকে একটি টিম হিসেবে কাজ করতে হবে।" তিনি খেলাধুলার উদাহরণ টেনে বলেন, যেকোনো খেলায় টিমওয়ার্কের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। একজন খেলোয়াড়ের সামান্য ভুলে পুরো দলের সাফল্য ব্যাহত হয়। ঠিক তেমনই, সরকারি কর্মকাণ্ডেও সমন্বয়ের ঘাটতি পুরো প্রশাসনকে ব্যর্থতার দিকে ঠেলে দিতে পারে।
ড. ইউনূস বলেন, "সরকার পরিচালনার জন্য সবার মধ্যে বোঝাপড়া ও সমন্বয় থাকা আবশ্যক।" তিনি সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতা গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
সরকারি কাজের দক্ষতা ও সৃজনশীলতা: প্রধান উপদেষ্টা প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কেবল গৎবাঁধা নিয়ম মেনে কাজ না করে সৃজনশীলতার মাধ্যমে সেবার মান উন্নত করার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, "এটাই সময় নিজের সৃজনশীলতা প্রকাশের।"
ডিসিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, প্রতিটি জেলার প্রশাসকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকা উচিত। বাজারদর নিয়ন্ত্রণ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং নাগরিক সেবা প্রদানে কে কতটা এগিয়ে থাকতে পারে, তা নিয়ে যেন একটি স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা গড়ে ওঠে।
নাগরিক অধিকার ও প্রশাসনিক জটিলতা: নাগরিক সেবার প্রসঙ্গে ড. ইউনূস জন্মসনদ ও পাসপোর্ট ইস্যুর জটিলতার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, "জন্মসনদ পাওয়া নাগরিকের অধিকার। পয়সা দিলে যদি সনদ পাওয়া যায়, আর না দিলে না পাওয়া যায়, তবে সেটা সেবা নয়, হয়রানি।"
পাসপোর্ট ইস্যুতে পুলিশ ভেরিফিকেশনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, "পাসপোর্ট করা নাগরিক অধিকার। আমাকে জন্মসনদ বা এনআইডি দিতে কোনো পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগেনি, পাসপোর্টের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য হওয়া উচিত।"
সংখ্যালঘু সুরক্ষা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা: সংখ্যালঘু ও দুর্বল জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা নিশ্চিত করাকে সরকারে দায়িত্ব হিসেবে চিহ্নিত করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, "বিশ্ব আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।"
নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়েও তিনি জোর দেন এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান, যেন কোনোভাবেই এ বিষয়ে অবহেলা না হয়।
অহেতুক হয়রানি রোধে নির্দেশনা: সরকারি সেবাগ্রহণে অহেতুক হয়রানির বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, "সরকারের কাজ জনগণের অধিকার নিশ্চিত করা, হয়রানি করা নয়।" তিনি ডিসিদের উদ্দেশে বলেন, "সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ না রেখে তা মাঠপর্যায়ে কার্যকর করতে হবে।"
উপসংহার: ডিসি সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্য স্পষ্টভাবে প্রশাসনিক দক্ষতা, জনসেবা ও সমন্বয়ের ওপর জোর দিয়েছে। তার নেতৃত্বে এই সম্মেলন প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নতুন দিকনির্দেশনা দিয়েছে, যা আগামী দিনগুলিতে নাগরিক সেবার মান উন্নত করতে সহায়ক হবে। "সরকার মানেই সেবা, হয়রানি নয়"—এই বার্তাটি সম্মেলনের মূল সুর হয়ে রইল।