বর্তমানে কৃষি কাজে বেড়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার। নতুন নতুন যন্ত্রপাতির ব্যবহারের ফলে দেশের কৃষিখাতে পড়েছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। এসব যন্ত্রের ব্যবহারের ফলে যেমন কমেছে কৃষকের শ্রম ও খরচ, অপরদিকে বেড়েছে উৎপাদন। দেশের ধান উৎপাদনে শীর্ষ জেলা হিসেবে পরিচিত নওগাঁ জেলা। জেলার গুরুত্বপূর্ণ একটি উপজেলা হলো ধামইরহাট। এ উপজেলায় প্রতি বছরে প্রায় ৪০ থেকে ৫০টি কারখানায় তৈরি করা হচ্ছে কৃষিকাজে ব্যবহৃত আধুনিক পদ্ধতিতে ধান মাড়াই মেশিন বঙ্গা।
জানা গেছে, ধামইরহাট উপজেলায় ছোট বড় প্রায় ৫০টি কারখানায় বাণিজ্যিক ভাবে প্রতি বছরে প্রায় ১হাজার পিচ ধান মাড়াই বঙ্গা মেশিন তৈরি করা হচ্ছে। এসব মেশিন তৈরির কাজে প্রায় ৪শত জন শ্রমিকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ বেড়ে যাওয়াতে এসব মেশিন দেশের বিভিন্ন জেলায় বেশ সুনাম অর্জন করেছে। বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে বঙ্গা মেশিন কিনতে ছুটে আসেন ক্রেতারা। একটি মেশিন তৈরি করতে ৫জন শ্রমিক মিলে সময় লাগে মাত্র ৪দিন। একেকটি মাড়াই মেশিন বর্তমান বাজারে বিক্রয় করা হচ্ছে ৪লক্ষ ২০ হাজার টাকা থেকে ৪লক্ষ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে লোহাসহ সকল পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়াতে লাভের হার কমেছে পেশায় জড়িতদের। সরকারিভাবে সহযোগীতা পেলে কৃষিখাতে আরো ভালো মানের যন্ত্রাংশ তৈরির পরিকল্পনা করবেন এমনটা জানিয়েছেন এ কাজের সঙে জড়িত ব্যবসায়িরা।
উপজেলার আমাইতাড়া বাজারের গোলজার ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপ এর মালিক গোলজার হোসেন জানান, বর্তমানে এসব মেশিনের চাহিদা বেড়েছে। আমি ২০০৮ সালে ৪টি মেশিন তৈরির মাধ্যমে যাত্রা শুরু করি। বর্তমানে আমার কারখানায় ১০জন শ্রমিক কাজ করেন। আমি বর্তমানে ২০টি মেশিন তৈরি করছি। ১টি মেশিন শ্রমিক সঠিকভাবে কাজ করলে ৩দিনের মধ্যে তৈরি করা সম্ভব হয়। ১মাসে আমার কারখানায় ২০টি আধুনিক মানের বঙ্গা তৈরি করা হয়ে থাকে। মৌসুমে আরো বেশি মেশিন তৈরির অফার আসে। তিনি আরো জানান, এসব মেশিন মূলত আমন ও রোপা মৌসুমে বেশি বিক্রয় হয়। মেশিনগুলো বেশির ভাগ রংপুর, ফরিদপুর, সৈয়দপুর, ঢাকা, চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন যায়গাতে আমরা বিক্রয় করে থাকি। বর্তমান তৈরিকৃত মেশিনগুলো দিয়ে ধান, গম, সরিষাসহ বিভিন্ন ফসল মাড়াই করা সম্ভব। আমাদের দেখে বিভিন্ন স্থানে এসব মেশিন তৈরির কারখানা নতুন ভাবে হয়েছে।
বঙ্গা সমিতির সভাপতি আবদুর রহমান জানান, ধান মাড়াই কাজে ব্যবহৃত বঙ্গা মেশিন ২০০৮ সালে প্রথমে আমার হাতে তৈরি হয়েছে। বর্তমানে মেশিন তৈরির কাজে মালামাল বাজার মূল্য অনেক চড়া দামে ক্রয় করতে হয়। বিভিন্ন যন্ত্রপাতির পাইকারি বাজারে মূল্য বৃদ্ধি পাওয়াতে এখন মেশিন তৈরি করে লাভ হয় একেবার স্বল্প। এসব মেশিন তৈরিতে সরকারি ভাবে কোন সহযোগীতা পাওয়া যায় না। বেসরকারি সংস্থা থেকে উচ্চহারে সুদ নিয়ে ব্যবসা ধরে রাখছি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. তৌফিক আল জুবায়ের জানান, আমাদের উপজেলায় তৈরি বঙ্গা মেশিন দেশেরে বিভিন্ন জেলায় কৃষিখাতে ব্যাপক সুনাম বয়ে এনেছে। আমরা সবসময় কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরিতে কারখানা মালিকদের সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছি।