সুনামগঞ্জের গরীব দুখী অসহায় ভূমিহীন গৃহহীন সাধারণ মানুষের জন্য স্বপ্নের ঠিকানা আশ্রয়ন প্রকল্প গুচ্ছ গ্রাম

সুনামগঞ্জের গরীব দুখী অসহায় ভূমিহীন গৃহহীন সাধারণ মানুষের জন্য স্বপ্নের ঠিকানা আশ্রয়ন প্রকল্প গুচ্ছ গ্রাম৷ আর এই আশ্রয়ন গুচ্ছ গ্রামে বসবাসকারী মানুষের যাতায়াত ঘিরে গজারিয়া নদীতে খেয়াঘাটের উৎপত্তি৷ সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গজারিয়া নদী তীরবর্তীতায় বিগত সরকারের আমলে আশ্রয়ন প্রকল্পে ১৪৭টি পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণ করা হয়৷ এই আশ্রয়ন প্রকল্পে বসবাস করছেন গরীব দুখী অসহায় খেটেখুটে খাওয়া দিনমজুর সাধারণ মানুষজন৷ এই গুচ্ছ গ্রাম আশ্রয়ন প্রকল্পে হিন্দু মুসলিম পরিবার বাস করে থাকেন৷ ধর্মকর্ম করার নিমিত্তেগুচ্ছ গ্রামবাসীর উদ্যোগে মসজিদ নির্মাণ করা হয়৷ একজন ইমামও রেখেছেন তারা, যার ব্যায়বার বহন করছেন গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দারা৷ এ আশ্রয়ন প্রকল্প গুচ্ছ গ্রমে বসবাসকারীরা যাতায়াতের জন্য দু-আড়ইশ ফুটের গজারিয়া নদী পাড়ি দিতে হয় তাদেরকে৷ যার অবস্থান গৌরারং ইউনিয়ন এলাকায়৷ এ নদীদিয়ে প্রতিদিন গুচ্ছ গ্রামের বাসিন্দা দিনমজুর, ছাত্র-ছাত্রী, কৃষক সহ গ্রামের বাসিন্দাদের পারাপার হতে হচ্ছে৷ খেয়াঘাটটি ইজারা না দিয়ে মসজিদের ব্যায়বার বহনের জন্য দাবিদাওয়া রয়েছে তাদের৷ ছোট্ট এ খালে খেয়া পারাপারের সাকু ব্যবহারের মাধ্যমে পারার সম্ভব৷ মাত্র তিন/চার মাস বর্ষার পানিতে ইঞ্জিন চালিত নৌকার ব্যবহার হয়৷ এজন্য ইজারা না দেয়ার জন্য গুচ্ছ গ্রামবাসীরা গৌরারং ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের কাছে বারংবার আবদার ও আপত্তি জানিয়ে আসছেন৷

জানাযায়, গজারিয়া খালে খেয়াঘাট লিজ না দেওয়ার জন্য লালপুর গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা বাদশা মিয়া চলতি বছরের গত ৩০ এপ্রিল ২০২৫ইং সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন৷ অভিযোগে উল্লেখ করা হয় - ইউপি চেয়ারম্যান শওকত মিয়া, ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মমিন মিয়া গত ১৪৩১ বাংলা সনের জ্যৈষ্ঠ মাস হতে ৬ মাসের জন্য লালপুর (গুচ্ছ গ্রাম) সংলগ্ন গজারিয়া খাল জনগণের পারাপারের জন্য (একলক্ষ দশ হাজার) টাকায় অবৈধ ভাবে লিজ দিয়ে প্রত্যেক যাত্রীর কাছ থেকে দিনে ২০টাকা রাতে ৫০-১০০ টাকা হারে আদায় করা হচ্ছে৷ যাত্রীরা অধিক ভাড়ার অর্থ প্রদানে ব্যার্থ হলে মারধোর, অকথ্যভাষায় গালিগালাজ সহ শ্লীলতাহানির মত ঘটনাও ঘটছে৷ গুচ্ছগ্রামবাসীর স্বার্থে চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য ও ইজারাদারের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ সহ গজারিয়া নদীতে খেয়াঘাট ইজারা না দিয়ে উন্মুক্ত করার দাবি জানান তারা৷

জনস্বার্থে অসহায় হতদরিদ্র দিনমজুর শ্রমজীবী পরিবার ও ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থ বিবেচনা না করেই  চলতি ১৪৩২ বঙ্গাব্দে ইজারা দেওয়া হয়৷

দৈনিক আমার বার্তার প্রতিবেদককে গুচ্ছগ্রামের সি-৮নং ঘরের বাসিন্দা, অটোচালক সুবহান মিয়ার স্ত্রী মারুফা জানায়, ভাড়া দিতে না পারায় ঘাটের ইজারাদার দারুমিয়া ও তার ছেলে আমাকে ও আমার শিশু বাচ্ছাকে মারধর সহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে, আমি কারোকাছে বিচার পাইনি৷ তিনি আরো বলেন আমার স্বামী অটো গাড়ি চালক হওয়ার কারণে প্রতিদিনই রাতে বাড়িতে ফিরেন তার জন্য খেয়া পারাপারের জন্য ৫০/৭০ টাকা বাড়তি ভাড়া দিয়ে হয়৷ আমরা গরীব দিনমজুর অসহায় বলেই গুচ্ছ গ্রামে বাসবাস করি৷ আমাদের অন্যত্র যাওয়ার জায়গা নেই বলেই তাদের জুলুম অত্যাচার অবিচার সহ্য করতে হয়৷

লালপুর গুচ্ছ গ্রাম আশ্রয়ন প্রকল্পের পার্শ্ববর্তী বাসিন্দা ছমির মিয়া জানান, খেয়া পারাপারের জন্য ইজারাদার আমার কাছথেকে ২০ টাকা করে ভাড়া আদায় করেছেন৷ কমদিতে চাইলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে, তাই বাদ্য হয়েই দিতে হচ্ছে৷

এসময় গৌরারং ইউনিয়নের ১ ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান মুমিন মিয়ার উপস্থিতিতে লালপুর গুচ্ছ গ্রামের বাসিন্দা
মাসুক মিয়া, মোঃ আলী হোসেন, সমির উদ্দিন, আজিজুল, জহুর মিয়া, মোঃ ইয়াছিন মিয়া, মোঃ নূর উদ্দিন, লাল মিয়া প্রতিবেদকে বলেছেন, আমদের অভাব অনটনের সংসার দিনমজুরি করে সংসার চালাই এবং দিনশেষে একটু প্রশান্তির জন্য বাড়িতে এসে ঘুমাই৷ দিনের বেলা শুষ্ক মৌসুমে খেয়া পারাপারের জন্য ১০ টাক, বর্ষায় ২০ টাকা ভাড়া৷ অনেক সময় কাজে একটু দেরি হলে খেয়াপারাপারে সময় ২০-৫০ টাকা আবার কখনো কখনো ৭০-১০০ টাকা দিতে হয়৷ ইজারাদারের মনমতো না হলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ সহ্য করতে হয়, কাঁদা মাটিতে শাস্তি স্বরূপ নামিয়ে দেয় ইজারাদারের লোকজন৷ গজারিয়া নদীতে গুচ্ছগ্রামের ইজারাদারের জুলুম অত্যাচার অবিচার মারধর সহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজের তথ্য তুলে ধরনের এবং ইজারা বাতিল করার আহ্বান জানান কর্তৃপক্ষের কাছে৷

লালপুর গুচ্ছ গ্রাম গজারিয়া নদীতে খেয়া ঘাটে অধিক ভাড়া আদায় এবং ছাত্র-ছাত্রী সহ যাত্রীদের সাথে জুলুম অত্যাচার অবিচার মারধর সহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজের বিষয়ে ইজারাদার দারু মিয়া ও সোহেল মিয়া বলেন, গৌরারং ইউনিয়নের আওতায় থাকা গজারিয়া নদীর খেয়াঘাটটি পঞ্চাশ হাজার টাকায় এক বছরের জন্য ইজারা নিয়েছি৷ মৌখিক ভাবে পরিষদকে নগদ ২০ হাজার টাকা দিয়েছি৷ পরবর্তীতে বাকি টাকা দিবো৷ তিনি আরো বলেন, গৌরারং ইউনিয়ন চেয়ারম্যান উপস্থিত থেকে আমাকে ঘাট বুঝিয়ে দিয়েছেন৷ আর বলেন, শুষ্ক মৌসুমে আসা যাওয়ার ক্ষেত্রে ভাড়া ১০টাক এবং বর্ষা মৌসুমে ২০ টাকা নেওয়া হয়৷ রাতে যারা যান খুশি মতো কেউ ২০-৩০/৫০ দিয়ে থাকে৷ কারোর কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হয়না৷ অনেকেই ভাড়া বাকি জমিয়ে ফেলে এবং তাদের কাছে ভাড়া চাইলে গড়িমসি করেন৷ খারাপ আচরণ করা হয়নি৷

এব্যাপারে ইউপি সদস্য মুমিন মিয়া বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের আর্থিক উন্নতি ও আয় বৃদ্ধির জন্যই লালপুর গুচ্ছ গ্রাম গজারিয়া নদীর খেয়াঘাটটি ইজারা দেওয়া হয়েছে৷

এব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ শওকত আলী বলেন, ইউনিয়নের আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে খেয়াঘাট প্রতিস্থাপন করে ইজারা দেওয়া হয়ে৷ ইজারা প্রক্রিয়ায় ত্রুটি ও স্থানীয়দের আপত্তি থাকায় আপাতত খেয়া পারাপারের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে৷ ইউএনও মহোদয়ের সাথে আলাপ করে পরবর্তীতে পূণঃদরপত্র আহ্ববানের প্রক্রিয়ায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে ইজারা প্রদান করা হবে৷ তিনি বলেন, মারধোরের বিষয়ে আমাকে আগে জানানো হলো শালিসি ব্যবস্থা গ্রহণ করতাম৷

ইজারা সম্পর্কে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইউএনও অতীশ দর্শী চাকমার কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদকে বলেন, অভিযোগ পেছি, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে৷