নরসিংদী সদর উপজেলার শিলমান্দী ইউনিয়নে আধা শতাংশ জমিকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ, দেয়াল নির্মাণ এবং তা ভাঙচুরের অভিযোগে পুরো এলাকাজুড়ে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। ঘটনার জেরে স্থানীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক উত্তাপও লক্ষ্য করা গেছে। পাল্টাপাল্টি বক্তব্য, দলীয় প্রভাব এবং প্রশাসনিক দ্বিধা—সব মিলে জমে উঠেছে রহস্যঘেরা বিতর্ক।

শিলমান্দী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ব্যবসায়ী মো. আলমগীর হোসেন দাবি করছেন, তার দোকানের পাশের প্রায় আধা শতাংশ জমি তিনি বহু বছর ধরে ব্যবহার করে আসছেন। জমিটির প্রকৃত মালিকানা তার বলে তিনি দাবি করেন এবং সে বিষয়ে একাধিকবার স্থানীয় আবদুল্লাহ ড্রাইং কারখানার মালিক সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করেও সাড়া না পেয়ে ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ দেন।

আলমগীরের ভাষ্য অনুযায়ী, গত ২২ জুলাই মঙ্গলবার ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সেলিনা বেগম ও কয়েকজন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতার উপস্থিতিতে এক বৈঠকে জমি তার দখলে দেওয়ার মৌখিক সিদ্ধান্ত হয়। ওই দিনই তিনি সেখানে ইটের একটি দেয়াল নির্মাণ করেন।

পরদিন ২৩ জুলাই বুধবার ঘটে নাটকীয় মোড়। আলমগীর অভিযোগ করেন, স্থানীয় বিএনপি নেতা হারুনুর রশিদ ও তার অনুসারীরা দলবল নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে নির্মিত দেয়ালের কিছু অংশ ভেঙে দেন এবং নির্মাণকাজে বাধা দেন।

আলমগীর বলেন, “চেয়ারম্যান ও রাজনৈতিক নেতাদের উপস্থিতিতে জায়গা বুঝে পেয়েই দেয়াল দিয়েছি। পরদিন এসে হারুনুর রশিদ সাহেব ও তার লোকজন জোর করে তা ভেঙে দেন। এটি সরাসরি আইনের লঙ্ঘন এবং অন্যায়।”

অভিযোগ অস্বীকার করে বিএনপি নেতা হারুনুর রশিদ বলেন, “আমরা কোনো হুমকি দিইনি, দেয়ালও ভাঙিনি। বরং সমাজিক দায়িত্ববোধ থেকেই ঘটনাস্থলে যাই এবং উভয় পক্ষকে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে সমাধানের আহ্বান জানাই। যদি দেয়াল ভাঙা হয়ে থাকে, তার প্রমাণ নিশ্চয় সিসি ক্যামেরায় পাওয়া যাবে।”

একই সঙ্গে জমির প্রকৃত মালিক দাবি করে আবদুল্লাহ ড্রাইংয়ের মালিক সিরাজুল ইসলাম বলেন, “আলমগীর একসময় আমার কারখানার কর্মচারী ছিলেন। তিনি জমির মালিক নন। আমি বৈধ প্রক্রিয়ায় জমিটি ক্রয় করেছি এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আমার দখলে রয়েছে।”

শিলমান্দী ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সেলিনা বেগম জানান, “এই জমি নিয়ে পূর্বেও একাধিকবার উভয় পক্ষকে নোটিশ করা হয়েছিল। চূড়ান্ত দরবারে দুই পক্ষ থাকার কথা থাকলেও একটি পক্ষ অনুপস্থিত ছিল। ফলে কোনো চূড়ান্ত রায় বা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।”

ঘটনাটিকে ঘিরে স্থানীয়দের মধ্যেও মতভেদ তৈরি হয়েছে। কেউ আলমগীরের পক্ষে, আবার কেউ বিষয়টিকে ‘সাজানো নাটক’ বলেও অভিযোগ তুলেছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা কামরুজ্জামান বলেন, “ঘটনার দিন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, সভাপতি এবং সেক্রেটারি সবাই উপস্থিত ছিলেন। তারা আলমগীরকে দেয়াল নির্মাণ থেকে বিরত থাকতে বলেন। কিন্তু সবাই চলে যাওয়ার পর তিনি একতরফাভাবে দেয়াল তৈরি করেন এবং পরে নাটক সাজিয়ে অভিযোগ করেন দেয়াল ভাঙা হয়েছে।”

অন্যদিকে, এক প্রবীণ নাগরিক বলেন, “জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব থাকলে সেটা আদালতের মাধ্যমে বা ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে সমাধান হওয়া উচিত। জোর করে দখল বা ভাঙচুর কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”

উভয় পক্ষই জমির মালিকানা নিয়ে অনড় অবস্থানে রয়েছে। ফলে বিষয়টি এখন সাধারণ জমি বিরোধ না থেকে সামাজিক এবং রাজনৈতিক উত্তেজনার নতুন উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয়রা মনে করছেন, এ নিয়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত প্রয়োজন, যেন প্রকৃত সত্য উদঘাটন হয় এবং ভবিষ্যতে এর পুনরাবৃত্তি বন্ধ করা যায়।

বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজে জমি সংক্রান্ত বিরোধ নতুন কিছু নয়। তবে যখন তা রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রশাসনিক অনির্ধারকতায় জড়িয়ে পড়ে, তখন তা শুধু ব্যক্তি স্বার্থ নয়—বরং পুরো এলাকাবাসীর নিরাপত্তা ও শান্তির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন কত দ্রুত, নিরপেক্ষ ও কার্যকরভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করে, সত্যতা উন্মোচন করে এবং শান্তিপূর্ণ সমাধান নিশ্চিত করতে পারে।