আজকাল হজমজনিত সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্য একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে উঠেছে। অতিরিক্ত ফাস্টফুড, অনিয়মিত জীবনযাপন ও মানসিক চাপের কারণে অনেকেই নানা রকম পেটের সমস্যায় ভুগছেন। এই প্রেক্ষাপটে প্রাকৃতিক উপায়ে পেটের সমস্যা সমাধানে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ইসবগুলের ভুসি।
ইসবগুলের ভুসি কী?
ইসবগুলের ভুসি (Psyllium Husk) হলো এক প্রকার প্রাকৃতিক আঁশ, যা Plantago Ovata নামক গাছের বীজের বাইরের পাতলা আবরণ থেকে সংগ্রহ করা হয়। এই গাছ মূলত ভারত, পাকিস্তান ও ইরান অঞ্চলে বেশি জন্মায়। যখন এই ভুসি পানির সংস্পর্শে আসে, তখন এটি অনেকটা জেলের মতো একটি আঠালো পদার্থে রূপ নেয়।
এই ভুসির প্রধান উপাদান হলো দ্রবণীয় আঁশ (soluble fiber)। শরীরে প্রবেশ করার পর এটি অন্ত্রে গিয়ে পানি শোষণ করে এবং মলকে নরম ও সহজে নির্গমনের উপযোগী করে তোলে, ফলে মলত্যাগ স্বাভাবিক ও আরামদায়ক হয়। এ কারণে এটি কোষ্ঠকাঠিন্য বা হজম সমস্যার জন্য অত্যন্ত উপকারী বলে বিবেচিত হয়।
এছাড়া, ইসবগুলের ভুসি পেটের ভেতর ফাঁকা জায়গা পূরণ করে কিছুটা ভরাট ভাব সৃষ্টি করে, যা অতিরিক্ত খাওয়া কমাতে সাহায্য করে। আবার এটি অন্ত্রে গিয়ে ধীরে ধীরে গ্লুকোজ শোষণ করে, ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকে। এই গুণগুলোর জন্য ইসবগুলের ভুসি শুধু হজম নয়, বরং ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল ও ওজন নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক।
ইসবগুলের উপাদানসমূহ:
দ্রবণীয় আঁশ (soluble fiber), প্রোটিন, হালকা পরিমাণে আয়রন ও ক্যালসিয়াম, কার্বোহাইড্রেট
ইসবগুলের উপকারিতা:
১. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: ইসবগুল অন্ত্রে গিয়ে পানি শোষণ করে ও পায়খানাকে নরম করে সহজে বের হতে সাহায্য করে।
২. হজমশক্তি বাড়ায়: নিয়মিত খেলে হজম ভালো হয় এবং খাবার ভালোভাবে রক্তে মিশে যায়।
৩. গ্যাস্ট্রিক ও অ্যাসিডিটি কমায়: পেটে গ্যাস ও জ্বালাপোড়া প্রশমনে সাহায্য করে।
৪. রক্তে কোলেস্টেরল কমাতে সহায়ক: গবেষণায় দেখা গেছে, এটি রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমাতে পারে।
৫. ডায়াবেটিস রোগীর জন্য উপকারী: এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
৬. ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক: পেট ভরা রাখে, ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে।
৭. ত্বক ও শরীরকে ঠান্ডা রাখে: গ্রীষ্মকালে ইসবগুল শরীরকে ভেতর থেকে ঠান্ডা রাখে।
কীভাবে খেতে হবে?
১. এক গ্লাস পানিতে ১ থেকে ২ চা চামচ ইসবগুলের ভুসি মিশিয়ে নিন।
২. ভালোভাবে নাড়িয়ে সাথে সাথে পান করুন, কারণ এটি দ্রুত জেলির মতো হয়ে যায়।
3. ইফতারের পর, ঘুমানোর আগে, কিংবা সকালে খালি পেটে খাওয়া সবচেয়ে উপকারী।
4. প্রতিবার ইসবগুল খাওয়ার সময় ১–২ গ্লাস পানি পান করা জরুরি।
এক দিনে কতটুকু খাওয়া যাবে?
সাধারণভাবে দিনে ৫-১০ গ্রাম (১-২ চা চামচ) ইসবগুল খাওয়া নিরাপদ। তবে অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়, বিশেষ করে পানি ছাড়া খেলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
অতিরিক্ত খেলে কী হয়?
পেট ফেঁপে যাওয়া, গ্যাসের সমস্যা, অতিরিক্ত পানি না খেলে পেট আরও শক্ত হয়ে যেতে পারে, কিছু ক্ষেত্রে বমি বা অস্বস্তি হতে পারে।
কাদের খাওয়া উচিত নয় বা সাবধানতা:
যাদের অন্ত্রে ব্লক বা Obstruction আছে, ছোট শিশুরা (ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া), যারা পানি কম পান করেন, ওষুধের সাথে খেতে হলে ১-২ ঘণ্টা বিরতি রেখে খাওয়া ভালো। অতিরিক্ত ওষুধ নির্ভরতা না বাড়িয়ে প্রাকৃতিক উপায়ে হজমশক্তি বাড়াতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ইসবগুলের ভুসি হতে পারে একটি নিরাপদ ও কার্যকর সমাধান। তবে যেকোনো প্রাকৃতিক উপাদানের ক্ষেত্রেই যেমন নিয়ম ও পরিমিতি গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি ইসবগুলও নিয়ম মেনে গ্রহণ করলেই দেবে সর্বোচ্চ উপকার।