মানবজীবন,জীববৈচিত্র্য পরিবেশ ও বনের গুরুত্ব অপরিসীম, অতপ্রোতভাবে জড়িত। বন জীববৈচিত্র্যের এক বড় আধার

মানবজীবন,জীববৈচিত্র্য পরিবেশ ও বনের গুরুত্ব অপরিসীম, অতপ্রোতভাবে জড়িত। বন জীববৈচিত্র্যের এক বড় আধার। বনে ফলের গাছ, খাবার ও পানির চরম সংকটাপন্ন।   মাটির পুষ্টি,কৃষির উৎকর্ষ আর জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে বনের ভূমিকা অনবদ্য। বন শুধু খাদ্যের সংস্থান, জীববৈচিত্র্যে রক্ষা, মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে না, জ্বালানির উৎস বটে। নদীর প্রবাহে বনের প্রভাব আছে। বন থাকলে ঝর্ণা বা ঝিরি থাকে,সেখানে পানির প্রবাহ থাকে। বন পানির সংরক্ষণাগার। 
 পৃথিবী,গ্রহ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বন ও পরিবেশ সুরক্ষা জরুরী প্রয়োজন। বন অধ্যুষিত অঞ্চল সড়ক ও রেল যোগাযোগ গতিবিধি ২০ কিমি মেনে চলার নির্দেশ।  কিন্ত সড়ক ও রেল যোগাযোগ গতিবিধি অমান্য করে গাড়ি চলাচল করছে।
পরিবেশ কথা বলতে প্রথমে যে উত্তরটা সবার মাঝে বিরাজমান  আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে তার সব কিছুই পরিবেশ। তবে পরিবেশ শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত। পাহাড়,বন,জঙ্গল,নদী,পানি,মাটি,বায়ু,মানুষ আবাসস্থলের গুণাগুণ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ক্ষুদ্র হতে বৃহৎ আকারে শিল্প কলকারখানা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে পরিবেশে।  পরিবেশ  প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্টভাবে গড়ে ওঠেছে। সম্পূর্ণরুপে প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে ওঠা পাহাড়,বন,জঙ্গল,হাওড়,জলাভূমি, জলাশয় ও সামাজিক বনায়ন পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।  প্রাকৃতিক পরিবেশে নানান প্রজাতির উদ্ভিদ, প্রাণি ও পশুপাখির খাদ্য,আবাসস্থল,চারণভূমি বিরাজমান যেখানে জীব বৈচিত্র্য, বন্য প্রাণি ও পশুপাখি নির্ভয়ে নির্জনে চলাফেরা, জীবনযাপন ও বংশবিস্তার করতে পারে। প্রাকৃতিক ও সামাজিক বনায়ন পরিবেশে বেড়ে ওঠা বিভিন্ন প্রজাতির লতা- পাতা, বাঁশ,বেত,গুল্মলতা, ঝোপঝাড়, বনজ ঔষধি ও কাঠ জাতীয় গাছ-গাছালি প্রভৃতি পরিবেশে বাতাসের সাথে মিশে থাকা  শিল্প কলকারখানা,ইটভাটার কালো ধোঁয়া,যানবাহন কালো ধোঁয়া, রাস্তাঘাট ও অবকাঠামো উন্নয়নে কালো ধোঁয়া, কৃষি কাজে ব্যবহৃত সারে উৎপাদিত বিষাক্ত গ্যাস  কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনো অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড, সালফিউরিক এসিড প্রভৃতি  শোষণ করে এবং মানুষ, প্রাণি ও পশুপাখি শ্বাস- প্রশ্বাস চালিয়ে বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন ত্যাগ করে থাকে। মৌলভীবাজার জেলা কমলগন্জ উপজেলায় অবস্থিত  সংরক্ষিত বনাঞ্চল  লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্দ্যানে পর্যাপ্ত পরিমাণে বন ও ফলজ বৃক্ষ না থাকায় জীব বৈচিত্র্য  বন্যপ্রাণি বানর,মেছোবাঘ,গন্ধগকুল,লজ্জাবতী বানর, হরিণ ও সরিসৃপ অজগর সাপ খাবার সন্ধানে লোকালয়ে বিরাজ করছে।  খাবারের খোঁজে বানর বাচ্চাসহ দলবেঁধে চা বাগান,রাবার বাগানের গাছে গাছে অবস্থান করে রাবার গাছের বীজ চিবিয়ে খাচ্ছে ও লতা পাতা খাওয়ার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। কিছু সংখ্যক বানর  শহরে বাসা বাড়ি,হোটেল মোটেল,রেষ্টুরেন্ট, ফলমূলের দোকান,অফিস বারান্দা,হাট বাজারে চলে আসছে। বাচ্চা সহ বানর দলের ক্ষুধার্ত বুঝে সহৃদয় ব্যাক্তিরা কলা,পাউরুটি,পরতা,ফলমূল কেটে টুকরো টুকরো করে প্রদান করে। আবার অনেক সময় বানর চুপিসারি চালাকি করে কলা,ফলমূল লাফ দিয়ে ধরে দৌড়ে বাসা-বাড়ি,দোকান-পাটের ছাদে উঠে যায়। লোকালয়ে বসবাসকারি অসচেতন মানুষ  বন্যপ্রাণি ও সরিসৃপ প্রজাতি প্রাণিকে প্রাণের ভয়ে মেরে ফেলছে আর সচেতন মানুষ শ্রীমঙ্গল শহরে অবস্থিত বন্য প্রাণি সেবা ফাউন্ডেশন পরিচালকের সাথে যোগাযোগ করে রক্ষা করছে। বাংলাদেশ অন্তর্বতীকালীন সরকার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা সৈয়দ রিজওয়ানা হাসান  পলিথিন ব্যবহারে পরিবেশ মারাত্মক ঝুকি ও জলবায়ু পরিবর্তন হুমকিস্বরুপ হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি,নির্দেশ প্রদান, পলিথিন ব্যবহারে নিষিদ্ধ করেন। মৌলভীবাজার জেলা বিভিন্ন শহর, দোকান পাট, হাটবাজার,খোলা বাজারে ঘুরে দেখা যায় পাইকারি দোকানে পলিথিন প্রকাশ্যেই পাইকারি দামে বিক্রি করছে। এসব পলিথিন নিত্য প্রয়োজনীয়  বিভিন্ন দোকান পাট, মাছ বাজার, ফলের দোকান, সবজি বাজার সহ প্রভৃতিতে ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে।  ব্যবহারকৃত হোটেল মোটেল, রেষ্টুরেন্ট, গৃহস্থালি বর্জ্য, বাসা বাড়ি, দোকান পাট পলিথিনসমূহ রাস্তাঘাট, নদী নালা, খাল বিল, ছড়া গাং,যেখানে সেখানে ছুড়ে ফেলছে বা একত্রিত করে স্তুফ আকারে জমা করছে। নদী নালা, খাল বিল,ছড়া গাং এ ছুড়ে ফেলা গৃহস্থালি বর্জ্য,পলিথিনসমূহ নদী নালা,ছড়া বা গাং পানি দূষিত করছে যা জলজ প্রাণি পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকির প্রভাব পড়ছে। গৃহস্থালি বর্জ্য ও প্লাষ্টিক পলিথিন খোলা জায়গায় স্তুপ করে রাখলে, জ্বালালে আশপাশের পরিবেশে কালো ধোঁয়ায় পথচারী সাধারণ  মানুষের শ্বাস- প্রশ্বাসে ব্যাঘাত, গন্ধে যেন দম বন্ধ হয়ে যায় বলে মন্তব্য করেন।  প্রাণিকূলে প্রাণী  পশুপাখি আবাসস্থল বনভূমি নিধন করে চলেছে। জলাশয়ে জলজ প্রাণীর আবাসস্থল  পানি বিভিন্ন রাসায়নিক বিষাক্ত পদার্থ ও শিল্প কলকারখানার পয়ঃবর্জ্য নিষ্কাশনে দূষিত হচ্ছে। অপরদিকে সাধারণ মানুষের জীবনধারণ ও বেঁচে থাকার জন্য ফসলি খাদ্যের উপর নির্ভরশীল।  খাদ্য উৎপাদনের জায়গা কৃষি জমির মাটি অর্থ্যাৎ ফসল উৎপাদন উর্বরতা মাটি ( টপ সয়েল) মাটি কাটা  দিনের পর দিন ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি  পাচ্ছে। প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বন,  ভূমি ও পরিবেশ আইনে  জমির উর্বরতা মাটি( টপ সয়েল) কাটার অভিযান ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে বন ও পরিবেশ ক্ষতিকারক দস্যু ও  মাটি ব্যবসায়ী মাটি কাটা বন্ধ হচ্ছে না।  স্থানীয় গুটি কয়েক প্রভাবশালী ব্যাক্তির নামে  ছত্রছায়ায় বনভূমির গাছ গাছালি বন নিধন, জমির ( টপ সয়েল) মাটি কাটা ও বালি বিক্রির মহোৎসব কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলে জানা গেছে। সচেতন মহল বলছেন সংরক্ষিত বনাঞ্চল অরক্ষিত অবস্থা,সংরক্ষন ও  ব্যবস্থাপনার অভাব, স্থানীয় পরিবেশগত নীতি ও উন্নয়ন বিষয়ে  জনসচেতনতার অভাব রয়েছে।  যা বিশ্ব পরিবেশ, বন ও  জলবায়ু পরিবর্তন টেকসই উন্নয়ন বাধাগ্রস্তের প্রভাব পড়ছে।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্দ্যান ব্যবস্থাপনা কমিটির  সদস্য জনক দেববর্মা বলেন আমরা লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্দ্যানের ভিতরে সড়ক যোগাযোগ পরিবহন ও ট্রেন চলাচলের গতিবিধি ২০কিমি  কমানোর উদ্দ্যোগ প্রস্তাব কার্যকর করা হয়েছে।। এই গতিবিধি মানছে না ফলে দূর্ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। বন্য পশু প্রাণী লোকালয়ে এসে স্থানীয় মানুষের শস্য উৎপাদন খেয়ে নষ্ট করে ফেলছে এটা সত্য। বনের ভিতরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফলের গাছ ও গাছ- গাছালি লাগানোর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ বাজেট প্রস্তাব উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট অবগত করা হয়েছে।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ব্যবস্থাপনা কমিটি সহ সভাপতি আমেনা বেগম বলেন লাউয়াছড়া বনের ভিতরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফলের গাছ-পালা, খাবার ও পানির অভাব রয়েছে। যার কারণে বন্য প্রাণীরা লোকালয়ে খাবার ও পানির খোঁজে রেব হয়ে যাচ্ছে। যদি বনের ভিতর খাবার ও পানি থাকত তাহলে বনের ভিতরে তারা থাকত। এ বিষয়ে প্রশাসন,বন বিভাগ ও বন্য প্রাণী রেঞ্জারদের সাথে মিটিং করে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার সহকারি  পরিচালক মাঈদুল ইসলাম বলেন পরিবেশ অধিদপ্তর পক্ষ থেকে মাইকিং, জনসচেতনতা লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম, পরিবেশ ক্ষতিকারক উপাদান পলিথিনসহ প্রভৃতি, অবৈধ  ইটভাটা নিষিদ্ধ অভিযান কার্যক্রম চলামান আছে ও ভবিষ্যতে অব্যাহত থাকবে।