সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও বীর
মুক্তিযোদ্ধা কে এম নূরুল হুদাকে প্রকাশ্যে হেনস্তা করার ঘটনায় গভীর
ক্ষোভ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন যশোরের ৩৪ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তারা এই
ঘটনাকে ‘জাতির জন্য লজ্জা’ উল্লেখ করে দ্রুত দোষীদের বিচারের আওতায় আনাসহ
এ ধরনের অপতৎপরতা রোধে অন্তর্র্বতী সরকারের কাছে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার
আহ্বান জানিয়েছেন।
সোমবার (২৩ জুন) রাতে যশোর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিট কমান্ডের দলীয়
প্যাডে ৩৪ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বাক্ষরসহ একটি লিখিত বিবৃতি গণমাধ্যমে
পাঠানো হয়। এতে দেশের সম্মানিত বীর সন্তানদের এমন লাঞ্ছনার বিরুদ্ধে দৃঢ়
অবস্থান তুলে ধরা হয়।
উল্লেখযোগ্য স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে ছিলেন- বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স
(বিএলএফ)'র বৃহত্তর যশোরের ডেপুটি প্রধান রবিউল আলম। জেলা মুক্তিযোদ্ধা
সংসদের সাবেক কমান্ডার এ এইচ এম মুযহারুল ইসলাম মন্টু। সদর উপজেলা
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আফজাল হোসেন দোদুল, আবুল হোসেন,
গোলাম মোস্তফা, নজরুল ইসলাম চাকলাদার, জি এম ইউসুফ আলী, আব্দুস সালাম সহ
আরও ৩৪ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা।
বিবৃতিতে বলা হয়, বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল হুদা মহান মুক্তিযুদ্ধে একটি
বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাকে এভাবে বাড়ির বাইরে ডেকে এনে প্রকাশ্যে
মারধর করে জুতা পরিয়ে দেওয়া। এটা শুধু নিন্দনীয় নয়, বরং জাতির জন্য
লজ্জার। এ ঘটনায় আমরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছি এবং দ্রুত বিচার দাবি
করছি।
তারা আরও বলেন, “রাষ্ট্রের দায়িত্ব জনগণের জানমাল ও সম্মান রক্ষা করা।
কিন্তু এই ঘটনায় মনে হচ্ছে, দেশে মানুষের আত্মসম্মান রক্ষার সুযোগও আর
নেই। কেউ যদি সাবেক সিইসি’র বিরুদ্ধে অভিযোগ করে, তাহলে তার জন্য আইন
আছে। কিন্তু প্রকাশ্যে তাকে জুতা পরিয়ে অপমান করার কোনো অধিকার কারও
নেই।”
সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আফজাল হোসেন দোদুল বলেন,
“একজন মুক্তিযোদ্ধাকে এভাবে প্রকাশ্যে হেনস্তা করা কোনোভাবেই সভ্য দেশের
চিত্র হতে পারে না। আমরা এ ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি এবং এর সঙ্গে জড়িতদের
কঠোর বিচার দাবি করছি।”
গত রোববার (২২ জুন) সন্ধ্যায় রাজধানীর উত্তরায়, দুর্বৃত্তরা সাবেক সিইসি
একেএম নুরুল হুদাকে স্থানীয় জনতার সহায়তায় গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত
করে এবং পরে তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক
যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়, যেখানে দেখা যায়— স্থানীয় জনতা তাকে ঘিরে
রেখেছে, তার গলায় জুতা ঝুলিয়ে স্লোগান দিচ্ছে।
মুক্তিযোদ্ধারা জানিয়েছেন, দেশের একজন বীর সন্তান এবং জাতীয় দায়িত্বশীল
পদে থাকা ব্যক্তির প্রতি এমন আচরণ শুধু অবমাননাকর নয়, রাষ্ট্রীয়
ব্যর্থতার প্রতীকও বটে। তারা এই ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি
জানান এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যাতে না ঘটে, সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ
গ্রহণের অনুরোধ জানান।#