সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বহুলীর পদমপালে স্থাপিত একটি মক্তব খানা সরকারি করনের মিথ্যা আশ্বাসের আড়ালে শিক্ষা নীতিমালা উপেক্ষা করে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে অবৈধভাবে দীর্ঘদিন যাবৎ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা নামের সাইনবোর্ড লাগিয়ে প্রতিষ্ঠান সরকারি করনের দৌড় ঝাপ শুরুর অভিযোগ উঠেছে ইবতেদায়ী মাদ্রাসার প্রধান কাজী সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে। 

স্থানীয়দের অভিযোগ ও তথ্য অনুসন্ধানে জানাযায়, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বহুলী ইউনিয়নের পদমপাল গ্রামের শিক্ষানুরাগী আলাউদ্দিন মিয়ার সার্বিক প্রচেষ্টায় 
ভুমিদাতা নামদার সরকার,জাহের আলী, জয়নাল কারীসহ স্থানীয় পাঁচ ভাইয়ের দেয়া জমিদান এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্যোগে শিশু ও কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের ইসলামী দ্বীনি শিক্ষায় আরবি পাঠদানের জন্য স্থানীয় শিক্ষানুরাগী আলাউদ্দিন মিয়ার সার্বিক প্রচেষ্টায় স্থানীয়দের জমিদানের মাধ্যমে 
একটি মক্তব খানা উত্তোলন করে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে।  

মক্তবে নিয়মিত আরবি পাঠদানেছাত্র-ছাত্রী বৃদ্ধি হওয়ায় মক্তব ঘরের উন্নয়ন কল্পে পরবর্তীতে ইসলামি জালসা আয়োজনের মাধ্যমে গ্রামের দানশীল হিতৈষী ব্যক্তিবর্গ সাধ্য অনুযায়ী অর্থ ও ভূমি দান করে। এতে মক্তব ঘরের আয়তন বৃদ্ধি করে আরবি পাঠদান কার্যক্রম শুরু করেন। 

মক্তব ঘরের আয়তন বৃদ্ধি ও আরবি পাঠদানের কার্যক্রম প্রসারিত হওয়া দেখে স্থানীয় কাজী
সিরাজুল ইসলাম চুপিসারে জালিয়াতি করে এই  
মক্তব খানা প্রতিষ্ঠানের মাঝে আর একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন বলে জানাগেছে । 

গ্রামের সহজ সরল মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে পদমপাল স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা প্রধান শিক্ষক মোঃ সিরাজুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে। সিরাজুল ইসলাম ইবতেদায়ী মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক এর পাশাপাশি তিনি একজন অত্র এলাকার কাজি পেশায় জড়িত।  মক্তব ঘরটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে আরবি শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। 
উক্ত প্রতিষ্ঠানের আড়ালে অভিযুক্ত সিরাজুল ইসলাম অবৈধভাবে ভূমিদাতাদের না জানিয়ে তথ্য গোপন করে এলাকার গ্রামের কিছু ক্ষমতাশীল ব্যক্তিদের নিয়ে পদমপাল স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন, এবং সেই পরিবারগুলোর মধ্যে থেকে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। উক্ত প্রতিষ্ঠানের কোড নংঃ ৫০৩২৪।

সরেজমিনে দেখা যায়, স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা  স্থাপন, স্বীকৃতি, পরিচালনা, জনবল, কাঠামো সংক্রান্ত নীতিমালা বহির্ভূত হয়েছে। উক্ত প্রতিষ্ঠানের নামে ৩৩ শতাংশ অখণ্ড জমিও নেই, পরিচালনার জন্য কোন কমিটি নেই, এনটিসিআর মাধ্যমে অথবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক নিয়োগের নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। স্বতন্ত্রভাবে পরিচালিত ইসলামিক শিক্ষার প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৫ম শ্রেণি হতে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদানের পরিচালনা কার্যক্রম বা ক্লাস সক্রিয় নেই, মাদ্রাসার নামে রেজিস্ট্রিকৃত জমির নামজারি ও ভূমি উন্নয়ন কর হালনাগাদ দাখিল নেই, শিক্ষার্থী নুন্যতম ১৫০ জন থাকার নিয়ম অনুযায়ী প্রতি শ্রেনীতে ২০ জন শিক্ষার্থী থাকার নিয়ম থাকলেও শিক্ষার্থী নেই। ইবতেদায়ী বার্ষিক পরীক্ষায় ন্যুনতম ২০ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করার জন্য কোনো শিক্ষার্থী নেই। 
ক্লাস্টারএ শিক্ষা কর্মকর্তা তদন্তে যাওয়ার সংবাদ পেলে পার্শ্ববর্তী ডুমুরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে এসে উপস্থিত হার দেখানো হয়। 
এ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের বসার মতো পৃথক
কোন কক্ষ নেই, শিক্ষার্থীদের বসার জন্য সীট বেঞ্চ বা ঢালু বেঞ্চ নেই, বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, শৌচাগার নেই, খেলার মাঠ নেই,বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নেই। 
প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নামের তালিকানুযায়ী
অনুমোদিত পাঠ্যপুস্তক উত্তোলন করে শিক্ষার্থী না থাকায় সিরাজুল ইসলাম এর বাড়িতে রেখে দেয়া হয় বলে জানাগেছে। 
এছাড়াও অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রধানের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলেছে স্থানীয়রা। 

উপরোক্ত তথ্য গোপন করে  ভুয়া ও জাল কাগজপত্র দাখিল করে জাতীয়করণের জন্য সিরাজগঞ্জ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে গিয়ে তদবির করছেন। এমনকি গত ১৮ মার্চ ২০২৫ ইং তারিখে ঢাকা মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডেও কাগজপত্র দাখিল করেছেন বলে জানাগেছে।

এছাড়াও ইবতেদায়ী প্রধান,মোঃ সিরাজুল ইসলাম,সহকারী মৌলবি আঃ আলীম, সহকারী শিক্ষক হায়দার আলী,সহকারী শিক্ষিকা (বিজ্ঞান) নারগিস খাতুন, ক্বারী শিক্ষক মোঃ নজরুল ইসলাম এরা বৈধ নিয়োগ সংক্রান্ত কোন ধরনের প্রমানাদি (ডকুমেন্টস)দেখাতে পারে নাই।


ভূমিদাতারা বলেন, আমরা মক্তবখানা করেছি। সেখানে কোন ইবতেদায়ী মাদ্রাসা করা হবে না।
আমাদের এই মক্তবখানাটি সরকারি করনের সহায়তা করার কথা বলে সুচতুর কাজী
সিরাজুল ইসলাম আড়ালে ভুয়া ও জাল কাগজপত্র বানিয়ে এই প্রতিষ্ঠানটি সে স্বতন্ত্র 
ইবতেদায়ী মাদ্রাসা নামে প্রতিষ্ঠার পায়তারা 
করেছেন। সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অধিদপ্তরের নিকট স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ কামনা করছি। 

এ বিষয়ে ইবতেদায়ী প্রধান শিক্ষক, মোঃ সিরাজুল ইসলাম স্পষ্ট বক্তব্য দিতে পারে নাই সাংবাদিকদের। তাকে সাক্ষাৎকারের কথা বল্লে বিভিন্ন ধরনের অজুহাত দেখান তিনি।

মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এলিজা সুলতানা বলেন, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদিত বৈধ কাগজপত্র দাখিল করতে না পারলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।