এই আসনটি সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত। অতীতে একাধিকবার দলীয় পালাবদল, হেভিওয়েট প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং ভোট-রাজনীতির টানাপোড়েন এ আসনকে কেন্দ্রীয় পর্যায়েও বিশেষভাবে আলোচনায় নিয়ে এসেছে। এবারও এর ব্যতিক্রম ঘটছে না। বিএনপি, জামায়াত, খেলাফত মজলিস, জাতীয় পার্টি ছাড়াও সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও ইতোমধ্যে মাঠে সক্রিয় হয়েছেন। তবে বিএনপির ভেতরে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছেন দুই শীর্ষ নেতা—সাবেক সংসদ সদস্য কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান।
কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে নানা প্রতিকূলতা ও মামলা-মোকদ্দমা সত্ত্বেও সক্রিয়ভাবে রাজপথের আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। আন্দোলন-সংগ্রামে তার দৃঢ় অবস্থান এবং সাহসী নেতৃত্ব তাকে কর্মীদের কাছে “আন্দোলনের সৈনিক” হিসেবে পরিচিত করেছে।
শুধু সাংগঠনিক রাজনীতিতেই নয়, তিনি নিয়মিত টেলিভিশনের টকশোতে অংশ নিয়ে বর্তমান সরকারের সমালোচনায় সরব থেকেছেন। তার স্পষ্টভাষী বক্তব্য কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় রাজনীতিতে তাকে বিশেষভাবে আলোচিত করেছে। স্থানীয় নেতাকর্মীরা মনে করেন, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, কেন্দ্রীয় পর্যায়ে গ্রহণযোগ্যতা এবং সাহসী নেতৃত্ব মিলনকে এ আসনের একটি শক্তিশালী ও সম্ভাবনাময় প্রার্থী করে তুলেছে।
অন্যদিকে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান দীর্ঘদিন স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তৃণমূলের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ, জনসাধারণের সুখে-দুঃখে পাশে থাকা এবং এলাকায় উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কারণে তিনি ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্য। সমর্থকদের দাবি, মিজান নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব হিসেবে তরুণ ও প্রথমবারের ভোটারদের কাছেও ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন।
তার ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন, দলের ভেতরে তিনি যেহেতু মাঠপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে সবসময় যুক্ত থাকেন, তাই মনোনয়ন পাওয়া গেলে তার পক্ষে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সম্ভব হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মামলা-মোকদ্দমা বাংলাদেশের রাজনীতিতে অস্বাভাবিক কিছু নয়। বরং আন্দোলনের কারণে দায়ের হওয়া মামলা অনেক সময় নেতাদের জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে দেয়। কলিম উদ্দিন আহমদ মিলনের ক্ষেত্রেও বিষয়টি প্রযোজ্য। অপরদিকে, মিজানের স্থানীয় ভিত্তি ও তৃণমূলের সংযোগ তাকে সমানতালে প্রতিদ্বন্দ্বী করে তুলেছে। অর্থাৎ, বিএনপির মনোনয়ন যদি এ দুই প্রার্থীর মধ্যে থেকে হয়, তাহলে আসনটিতে হবে হেভিওয়েট লড়াই।
বিএনপির পাশাপাশি অন্যান্য দলও এ আসনে তাদের প্রস্তুতি শুরু করেছে। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী সাবেক প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুস সালাম আল মাদানী, খেলাফত মজলিসের হাফিজ মাওলানা আব্দুল কাদির এবং জাতীয় পার্টির জাহাঙ্গীর আলম ইতোমধ্যেই ব্যানার, পোস্টার ও গণসংযোগ কার্যক্রম শুরু করেছেন। ফলে এ আসনে বহুমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইঙ্গিত স্পষ্ট।
স্থানীয় ভোটাররা বলছেন, আসন যেই জিতুক না কেন, তাদের মূল প্রত্যাশা হলো এলাকায় টেকসই উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং জনসাধারণের দুঃখ-দুর্দশা দূরীকরণ। পাশাপাশি গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও জনগণের ভোটাধিকারের প্রতি সম্মান নিশ্চিত করাও তাদের অন্যতম দাবি।
সবমিলিয়ে বলা যায়, সুনামগঞ্জ-৫ আসনে আসন্ন নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, তা দিন যত গড়াবে ততই উত্তেজনা, সমীকরণ ও কৌশলের নতুন রূপ নেবে।