শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে নিয়োগের নামে ক্ষমতার খেলা যেন এক অভ্যস্ত চর্চা হয়ে দাঁড়িয়েছে

শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে নিয়োগের নামে ক্ষমতার খেলা যেন এক অভ্যস্ত চর্চা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনই এক চিত্র উঠে এসেছে খানসামা ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ জিল্লুর রহমান-এর নিয়োগ নিয়ে, যা শেষ পর্যন্ত আইনি বাঁধায় থেমে গেছে। মহামান্য হাইকোর্ট এর দ্বৈত বেঞ্চ এই নিয়োগকে অবৈধ আখ্যায়িত করে স্থগিতাদেশ জারি করেছেন এবং একইসঙ্গে রুল জারি করেছেন সংশ্লিষ্টদের প্রতি।
বিশ্বস্ত সুত্রে জানা যায়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালা ২০১৯ অনুসারে প্রতিষ্ঠানটির প্রথম পাঁচজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষকের মধ্য থেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়ার নিয়ম থাকলেও, মোঃ জিল্লুর রহমান সেই তালিকায় না থেকেও নিয়োগ পেয়েছেন। আরও বিস্ময়কর হলো, তিনি ‘সাচিবিক বিদ্যা’ বিষয়ে নিযুক্ত হলেও কলেজে সেই বিষয়ে কোনো বিভাগ, কোর্স কিংবা কারিকুলামই বিদ্যমান নয়। সুতরাং, নিয়োগের পুরো প্রক্রিয়াই ছিল নিয়ম-বহির্ভূত ও নৈতিকতার সীমা লঙ্ঘনকারী।
হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী, এই নিয়োগের আর কোনো আইনগত বৈধতা নেই। অর্থাৎ, মোঃ জিল্লুর রহমানের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করার আর কোনো সুযোগ অবশিষ্ট থাকলো না।
নিয়োগ প্রক্রিয়ার এহেন অস্বচ্ছতা ও প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা দেখে প্রশ্ন উঠেছে—এই প্রতিষ্ঠান কি আদৌ জ্ঞানের কেন্দ্র, না কি ব্যক্তিস্বার্থ ও প্রভাবশালীদের লীলাভূমি? যখন জনগণের করের টাকায় পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতে এমন ‘পেছনের দরজা’র নিয়োগ ঘটে, তখন তা শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের গায়ে কলঙ্ক নয়—বরং দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সর্বাঙ্গে পড়ে অন্ধকারের ছায়া।
এই রুল এবং স্থগিতাদেশ কেবল একটি পদ খালি হওয়া নয়, বরং এক ভয়ানক প্রশাসনিক গাফিলতির প্রামাণ্য দলিল, যেখানে ন্যায়বিচার হস্তক্ষেপ না করলে সম্ভবত কিছুই বদলাত না।
প্রতিষ্ঠান প্রধানের পদে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে কেবল পদাধিকার নয়, প্রয়োজন স্বচ্ছতা, নৈতিকতা ও বিধিমালার কঠোর অনুসরণ। আদালতের এই রায় যেন সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন অনিয়মের বিরুদ্ধে এক জাগরণ সৃষ্টিকারী বার্তা হয়ে দাঁড়ায়।