আড়িয়াল খাঁ নদীর উপর শতকোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত ২য় সেতুটি ভয়াবহ ভাঙ্গানের মুখে পড়ছে। বালুখেকোদের লুটের প্রভাবেই এমনটা ঘটেছে
এলাকাবাসী বলছেন,বিগত সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের দোসর চৌধুরী পরিবারের নাম ভাঙ্গিয়ে আড়িয়াল খাঁ নদীতে অব্যাহত ভাবে বালু লুটের প্রভাব পড়ছে এখন শতকোটি টাকার সেতুর উপর।
আড়িয়াল খাঁ সেতুর দক্ষিণ পাড়ের একজন পানের বরজ করা কৃষক বলেন, পতিত সরকারের সাবেক চীপ হুইপ নুরে আলম চৌধুরী লিটন এবং এমপি মুজিবুর রহমান নিক্মন চৌধুর নাম ভাঙ্গিয়ে পদ্মাসেতুর নির্মান কাজে এবং সেতু সংলগ্ন সংযোগ সড়কে তাদের স্বজনরাই ভরাট বালু, বালু মাটি সাপ্লাইয়ের কাজ করেন। যে কাজ নামে বেনামে চলছে দীর্ঘদিন পর্যন্ত। তারা পরিবার তান্ত্রিক ভাবে বালু মাটির ব্যাবসা করে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। ফলে অপরিকল্পিত ভাবে নদী থেকে মাটি লুটের প্রভাব পড়ছে জনগুরুত্বপূর্ণ সেতুর উপর।
সোমবার (৪ জুলাই) সরেজমিন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন কালে দেখাযায়, আড়িয়াল খাঁ নদীতে স্রোতের গতিবেগ বেড়ে নদীর তলদেশ খোলায়ে গিয়ে সেতুর পূর্ব পাশে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এমনটাই বললেন উপস্থিত সকলে।
অপরদিকে, সেতু সংলগ্ন এলাকা শিরখারা, কবিরাজের সন্নাসীরচড় এলাকার তিনজন, একজন বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠান প্রধান মোঃ আয়ুব আলী খান এবং রতন বসুনিয়া তারা আঃ রব মাষ্টার তিনজনই বলেন, নদী ভাঙ্গন তো নয় যেন বালু লুটের ফসল।
তারা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকা কালীন সময়ে নুরে আলম চৌধুরী লিটন, মনির চৌধুরী, নিক্মন চৌধুরী এদের লোকজনই ছিল পদ্মার দক্ষিন পাড়ের সরকার ও পদ্মা আড়িয়াল খাঁ নদীর মালিক। তাদের মনের ইচ্ছাই ছিল তাদের সরকারের আইন। তাদের উপর দিয়ে কেউ টু শব্দ করার সাহস পর্যন্ত কেউ পায়নি। আর আড়িয়াল খাঁ নদীর বালু কাটা তো ছিল মাছ- ভাতের মত একটি বিষয়।
পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ চলার সময় আড়িয়াল খাঁ নদী থেকে লাখ লাখ টন বালু মাটি বা ভরাট বালু কেটে জাজিরা পয়েন্ট থেকে ভাঙ্গা এ্যালিব্রেড এক্সচেঞ্জ এবং ভাঙ্গার গোলচক্কর পর্যন্ত বালু মাটির সরবরাহ করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাবেক একজন পানি সচিব বলেন, নদীর মাঝখানে কোথাও নদীর তীরে গভরী খাদ করে বালু মাটি কাটায় প্রচন্ড পানির তোড়ে পানিতে ঘুর্নায়ন সৃষ্টি হয়ে আপন গতিতে পানি ছুটে চলায় এই ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। প্রয়োজন নদী শাসন এবং ব্রীজ এলাকায় সিসি গাইডের বেড়িবাঁধ নির্মানের সেটা হয়নি।
ফলে স্রোত প্রচন্ড গতিবেগ নিয়ে তীরের এক পাড়ে আঘাত করায় এই তীব্র ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছে। কারন পানির গতি কোন কিছুই তে বাঁধা গ্রস্হ হচ্ছে না।
তাই, নদীর একপাড়ে পানির স্রোত বেশি আঘাত করায় ঔ পাড়ের মাটি আঁছড়ে নদীতে পড়ছে। কারণ পূর্বে, নদীর মধ্যে বড় বড় খাদ ও দীঘির মত থাকায়, স্রোতের ঘুর্নায়ন হয়ে নদীর তলদেশে আঘাত করে। ফলে পানির গতি পরিবর্তন হয়। ঘুর্নায়ন স্রোত ৫ গুন শক্তি সঞ্চার করে সেতুর পিলারকে আঘাত করায় সেতু সংলগ্ন ভয়াবহ ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, অপরদিকে, নদীতে উজান থেকে ধেয়ে আসা বানের পানি এবং অব্যাহত ১৫-২০ দিনে মুষলধারের বৃষ্টির পানিতে নদ নদীর পানি আরো বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সাথে বাড়ছে পদ্মা আড়িয়াল খাঁ নদীর পানি ও।
নদীর পানি গতি পরিবর্তন কেন এই বিষয় কথা হয় ফরিদপুর নদী গবেষণার বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার সাথে তিনি বলেন, বালু মাটি লুট হওয়ায় নদীতে বড় বড় খাদের স্রোতের ঘুর্নায়ন বলয়ে সৃষ্ঠি হয়। ফলে নদীর তলদেশ ভেঙ্গে নদীর স্রোত নদীর যে কোন এক তীরে ডুকে পড়লে ভাঙ্গনের তীব্রতায় বেড়ে যায়।
অপরদিকে, স্হানীয় ব্যাবসায়ীরা বলছেন সেতুতে নদী শাসন বাঁধ না থাকায় আড়িয়াল খাঁ সেতুই ভাঙ্গার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই সেতুটি যদি সত্যি সত্যি নদী ভাঙ্গের ভয়াবহতার মধ্যে পড়ে তা হলে মূহুর্তের মধ্যে ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দূর্ঘটনা।
সেতু যদি আড়িয়াল খাঁ নদীতে ভেঙ্গে পড়ে বা ভুমি ধ্বসের মধ্যে ও পড়ে তাহলে গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুটি দুই পাশে জনচলাচলের যে সড়কগুলো আছে সেগুলো মুখ থুবড়ে পড়বে। পাশাপাশি
৮ থেকে ১০ টি উপজেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ একেবারে বিছছিন্ন হয়ে যাবে।
ফলে চরম ক্ষতির মুখে পড়বে এই অঞ্চলের কমপক্ষে ২০-২৫ হাজার ব্যাবসায়ী। ক্ষতিকর মুখে সর্ব শ্রেণির মানুষ।
প্রসঙ্গত, মাদারীপুরের জেলার শিবচর উপজেলার এটি ২য় আড়িয়াল খাঁ সেতু। এই সেতু দিয়ে শিবচরের উৎরাইল, শিরুয়াইল, নিলুখী ও দত্তপাড়াসহ নদির পশ্চিমপাড়ের এলাকা।
সম্প্রতি সময়ে আড়িয়াল খাঁ নদীর দুই পাড়েই কম বেশী নদীভাঙ্গন চলছে। বেশ কিছু জায়গা চলতি মাসে নদের গর্ভে বিলীন হয়েছে।
সর্বশেষ সেতুর দুই পাড়ের এবং চারটি বাজারে সাধারন মানুষের মুখ মুখে বেরিয়ে পড়ছে আগে বালু লুটে ক্ষতি হয়েছে, কিন্তু যাদের ধারা ক্ষতি হয়েছে তারা তো আর এখন দেশে নেই তাহলে এখন কারা। এলাকার সাধারণ জনগণ বলেন বালু কাটা মেশিন আগের মতই আছে শুধু নেতৃত্ব বদল হয়েছে তাই বর্তমানেও এলাকার বিএনপি সমমনা নতুন কিছু লুটের দল নতুন করে গোপনে ও অনেকের চোখের আড়ালে অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে, আড়িয়াল খাঁ নদে বালু উত্তোলন করায় সেতুটি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এলাকার শিক্ষিত মহল বলছেন, শতকোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত আড়িয়াল খাঁ ২য় সেতুতে নদী শাসন বাঁধ না থাকায় সেতু ভাঙ্গার ও আশঙ্কা রয়েছে।